জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা রাশেদ সীমান্ত ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ করেছেন। খুব অল্প সময়ে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে নেয়া এই অভিনয় শিল্পী নাটকের পাশাপাশি ভ্রমণ পিপাসু একজন মানুষ। তাইতো সেই ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে হাফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণে নেমেছেন।
নাটকের জীবন থেকে প্রাকৃতিক জীবন বেশি পছন্দ করেন বলেই বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য আর নদীর জলে চিমটি কেটে ঢেউয়ের নৃত্যের তালে তালে ইলিশখ্যাত ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে এসেছিলেন। এখানে তিনি উপভোগ করেছেন চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী ত্রিনদীর মোহনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যেখানে মিলিত হয়েছে পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া। পশ্চিম দিগন্তে মেঘনার বুক ঘেষে লাল সূর্য অস্তে যাওয়া, গৌধূলী বেলায় পাখিদের নীড়ে ফেরা, নদীর কলতান, ছোট বড় নৌকা এবং নদীর জল কেটে লঞ্চ স্টীমারের অবিরাম ছুটে চলার দৃশ্য।
দু,দিনের এই ভ্রমণে তিনি মেঘনার বুকে জেগে উঠা মিনি কক্সবাজারও ঘুরে বেড়িয়েছেন। চাঁদপুর ভ্রমণে জনপ্রিয় এই নাট্যাভিনেতা রাশেদ সীমান্ত কে সঙ্গ দিয়েছেন চাঁদপুরেরই একঝাঁক সংস্কৃতিকর্মী চাঁদপুর মঞ্চের সদস্য তারই কাছের বন্ধু সালমান পাটওয়ারী, এম আর এম শোভন, ফয়সাল ফরাজী, সোহাগ পাঠান, জহিরুল ইসলাম আরিফ, আমির ও আল আমিন হাওলাদার সহ আরো অনেকে।
চাঁদপুরে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চেও তাকে সম্মান জানিয়ে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিলো। সেখানে তিনি চাঁদপুর ভ্রমণ নিয়ে ত্রিনদী, ইলিশ এবং চাঁদপুরের মানুষ সম্পর্কে তার ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
সদা হাস্যজ্জল এই জনপ্রিয় অভিনেতার সাথে এ প্রতিবেদকের সংক্ষিপ্ত কথা হলে তিনি বলেন, মূলত সরকারি ছুটির দিন ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে পরিবার নিয়ে নদী দেখার উদ্দেশ্যে ব্যস্ত শহর থেকে বের হওয়া। আর নদীর সেই সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই মূলত তিনি নদীমাতৃক জেলা চাঁদপুরে চলে আসেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ সীমান্ত চাঁদপুর সম্পর্কে বলেন, সত্যিই চাঁদপুর চাঁদের মতই অনেক সুন্দর। আগে ভাবতাম চাঁদপুর কেন নামকরণ করা হলো। কিন্তু চাঁদপুরে এসে তার সৌন্দর্য দেখে বুঝলাম এ জেলার নাম চাঁদপুরই হওয়াটাই সঠিক। যেখানে রয়েছে সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ত্রিনদীর মোহনা, পদ্মার রূপালী ইলিশ এবং চাঁদপুরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। সবকিছু মিলিয়ে মন ভালো থাকার একটি জায়গা হচ্ছে চাঁদপুর। এখানে এসে বুঝতে পারলাম এই শহরের মানুষগুলো অনেক সাহিত্য ও সংস্কৃতি মনা। এখানকার মানুষ অনেক অতিথি পরায়ন এবং খুব অল্প সময়ে মানুষকে আপন করে নেয়। এজন্য এই শহরের মানুষগুলো আমার খুব ভালো লেগেছে।
চাঁদপুরে ভ্রমণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাটকের জীবন থেকে প্রাকৃতিক জীবন বেশি পছন্দ করি। কারণ প্রকৃতি এবং নদীর সাথে আমার একটা মনের টান রয়েছে। বিশেষ করে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর আমার অনেক ভালো লেগেছে। যেখানে তিন নদীর মিলনস্থল। নদীর জলে ছোট বড় ঢেউয়ের খেলা, গাছ গাছালির সবুজ শ্যামল ছায়ায় ঘেরা খুব সুন্দর একটি মন জুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশ। তাই আমি সুযোগ পেলেই চাঁদপুরের সৌন্দর্য দেখার জন্য বার বার চাঁদপুরে চলে আসবো।
অভিনয় জগৎ সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজের যেসব অন্যায়, অবিচার এবং ভুলগুলো দেখেও আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারছিনা। অভিনয়ের মাধ্যমে কিন্তু আমরা সেইসব ভুলগুলোর প্রতিবাদ করে সমাজকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি। তার জন্যই আমার অভিনয়ের প্রতি এতটা টান।
জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা রাশেদ সীমান্ত ২০১৮ সালে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ”যে লাউ সেই কদু” নাটকে বাদশা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। ওই সময়ে ৬০০ নাটকের মধ্যে তার অভিনীত ”যে লাউ সেই কদু” নাটকটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সেই নাটকটি হিট হওয়ার পর থেকেই পর্যায় ক্রমে তিনি বিভিন্ন নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন। তার অভিনীত প্রত্যেকটি নাটকটি দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
অভিনেতা রাশেদ সীমান্ত এ পর্যন্ত মোট ২৭ টি নাটকে অভিনয় করেছেন।
তার উল্ল্যেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে, প্রতিদান, মানবতা, যে লাই সেই কদু, জামাই বাজার, বাবা, কর্মফল, হাটা জামাই, হিল্লা বিয়ে, নয়ন তারা স্টোর, দালাল, বরিশালের বাদশা, শয়তানের বাক্স,গ্রামীন শাটডাউন, শিয়াল বাড়িসহ আরো বেশ কিছু নাটক।
যে নাটক এবং অভিনয় দিয়ে সমাজের যতো অসঙ্গতি, অন্যায়, অবিচার, দোষ, ভুলসহ যতো অনিয়ম রয়েছে সকল মন্দ প্রতিরোধ করা যাবে। তেমন নাটকেই অভিনয় করার বেশি আগ্রহ তার।
সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে এভাবেই তিনি নিয়মিত অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যেতে চান।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ২ জানুয়ারি ২০২২