বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামে চাল বিক্রি হলেও এই নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই। মোটা চাল সরু করে এসব চাল তৈরি করা হয়। ফলে এসব চালে পুষ্টি উপাদান খুব কম থাকে। ধান কতটুকু ছাঁটাই করা যাবে, তা নির্ধারণ করে দিয়ে একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা হলে দোকানে যে নামেই চাল বিক্রি করা হোক না কেন, চালের বস্তায় ধানের আসল জাতের নাম লিখতে হবে।
আন্তর্জাতিক নিউট্রিশন অলিম্পিয়াডের কর্মসূচি সম্পর্কে জানাতে আজ সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যসচিব বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, বাজারে মিনিকেট নামে চাল বিক্রি হলেও মিনিকেট নামে ধান নেই বললেই চলে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এক সময় মিনিকেট নাম করে বিদেশ থেকে ধান আসছিল, তখন সেই কিটের নাম অনুসারে গ্রামের মানুষ নাম দিয়েছে মিনিকেট। এখন ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান ও মোটা ধানকে মিনিকেট বলছে।’
তিনি বলেন, ‘মিনিকেট চালে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই, তবে পুষ্টি উপাদান চলে যাচ্ছে। ধান যেটাই হোক, নাম দিচ্ছে মিনিকেট। এটা তাদের ব্র্যান্ড নেম। আমরা এখন চেষ্টা করব, ব্র্যান্ডিংটা আপনি যে নামেই করুন, মূল ধানের জাত বস্তায় লিখতে হবে।’
নাজমানারা খানুম বলেন, ‘ধানের ৮ শতাংশ পর্যন্ত আপনি ছাঁটাই করতে পারবেন। কিন্তু অনেক জায়গায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাঁটাই করা হচ্ছে—এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য। সে জন্য আমরা ছাঁটাই নীতিমালা করছি। নীতিমালা করতে একটি কমিটি করা হয়েছে, তারা কাজ করছে। এই কমিটি ঠিক করবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চালের কত শতাংশ ছাঁটাই করা যাবে।’
মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরু মিনিকেটের ক্ষেত্রে জিরাশাইল, শম্পাকাটারি—এই দুই রকমের ধানই বেশি। এমনকি নাজিরশাইল নামেও কোনো ধান নেই। এই সাদা চকচকে চালে কোনো পুষ্টি নেই। চাল কেটে ছোট করা হয়—এটা ঠিক না। চাল ছোট করলে ওজন কমে যায় বলে ব্যবসায়ীরা পোষাতে পারবেন না। এ জন্য তারা পলিশ করে, পলিশে ওজন কমে না।’
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আগে ঢেঁকি ছাটা চাল খেতাম। সেখানে চালের লাল অংশটা পাওয়া যেত। এখন অনেকে সেই চাল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। লাল চাল খাওয়ার অভ্যাস হলে মিলার ও ভোক্তার খরচ বাঁচে। চাল চকচকে করতে তিনটি ছাঁট দেওয়ার পর পলিশ করতে হয়। ফলে চালে আর পুষ্টি থাকে না।’
মোটা চালের দাম বাড়ছে না দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সরু ও মাঝারি চাল খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ফলে সরু চালের ওপর প্রভাব পড়েছে। এখন বোরো মৌসুমে ৮০ শতাংশের মতো সরু ও মাঝারি চাল উৎপাদন হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসের দিকে চালের দাম যাতে না বাড়ে, সে জন্য আমরা সচেষ্ট থাকি। যার জন্য গত বছর বেসরকারিভাবে কিছু চাল আমদানি করেছিলাম।’
খাদ্যমন্ত্রী জানান, এবার বেসরকারিভাবে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও ২ লাখ ৯৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে খাদ্যসচিব জানান, চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা লাভ করতে পারবেন না বুঝে তাঁরা আর আমদানি করেননি।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur