Home / চাঁদপুর / একাত্তরের বীভৎস নির্যাতনে দৃশ্যমান হলো বড়স্টেশন মোলহেডে!
একাত্তরের

একাত্তরের বীভৎস নির্যাতনে দৃশ্যমান হলো বড়স্টেশন মোলহেডে!

চাঁদপুর শহরের বদ্ধভূমি বড়স্টেশন মোলহেডে এক এক করে নারী-পুরুষদের ধরে নিয়ে আসছে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের বীভৎস অত্যাচারে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আটক নারীদের ধর্ষণ করে লোহার সাঁড়াশি দিয়ে একটি একটি করে হাতের আঙুলের নখ তুলে ফেলছে তারা। চারপাশে বন্দী মানুষের গলা থেকে পশুর মতো আর্তচিৎকার ভেসে আসছে। বীভৎস অত্যাচারের পর হত্যা করা হয় সকলকে। পুরো বড়স্টেশন জুড়ে লাশের স্তূপে পরিণত হয়। গলিত অর্ধগলিত এসব লাশ ফেলা দেওয়া হয় ডাকাতিয়া ও মেঘনার ঘূর্ণিপাকে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় মঞ্চায়িত হচ্ছে গণহত্যা পরিবেশ থিয়েটার। তারাই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) রাতে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মোলহেডে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার রেপাটরির নাট্যদলের সদস্যরা মধ্যরাতের মোলহেড নাটক মঞ্চায়িত করে।

মধ্যরাতের মোলহেড নাটকটির নাট্যকার নির্দেশক শিল্পী কলাকুশলী তাদের সকলের চেষ্টায় একাত্তরের মোলহেডের সেই বীভৎসতা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। ১৯২১ সালে ১০০ বছর আগে আরেকটি গণহত্যা এখানে হয়েছিল চা শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশদের। ৩০ হাজার শ্রমিককে এখানে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছিল।

এদিকে নাটকির পূর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। তিনি বলেন, মোলহেড চাঁদপুরের এক অনিন্দ্য সুন্দর একটি স্থান। কিন্তু মোলহেডে চাঁদপুরের অনেক মানুষের স্মৃতি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মোলহেডে নারীদের চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন। সেই দুঃসহ স্মৃতি চাঁদপুরের অনেক পরিবার বহন করে চলেছে। শুধু চাঁদপুরেই নয় সারাদেশে অসংখ্য বদ্ধভূমি রয়েছে। যেখানে অসংখ্য নির্যাতন হয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হবে। সঠিক ভবিষ্যৎ গড়তে সঠিক ইতিহাস জানা অতন্ত্য জরিুরি। তরুণ প্রজন্ম আজকের ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি।

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পূর্বে উদ্বোধকের বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ। জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উপ-পরিচালক মো. শামিম, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ও অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী প্রমুখ।

প্রতিবেদক: শরীফুল ইসলাম,১ ডিসেম্বর ২০২১