অবশেষে বন্ধ হলো চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাট ইজারা। এর মধ্য দিয়ে থামলো দীর্ঘ দিনের ইজারাদারের দৌরাত্ম আর রামরাজত্ব। বন্ধ হলো ইজারার নামে চাঁদাবাজি আর অতিরিক্ত অর্থ আদায় । এতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সংশ্লিষ্ট রুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন মালিক ও চালকরা।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে ফেরীঘাটে ইজারাদের দৌরাত্ব বন্ধ করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় অবশেষে ইজারাদার কর্তৃক পাকিং ইয়ার্ড ও টার্মিনাল চার্জ আদায় বন্ধ করতে নির্দেশ প্রদান করেছে ।
২ নভেম্বর মঙ্গলবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের থেকে বলা হয় চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাটের পার্কিং ইয়ার্ড চার্জ ও টার্মিনাল চার্জের ইজারা বাতিল করে বিআইডব্রিউটিএ-র নিজস্ব তত্বাবধানে পরিচালিত করতে আদেশ দেয়া হয়।
চিঠিতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাট নিয়ে যা বলো হলো
নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, চাঁদপুর-শরিয়তপুর হরিনা ফেরিঘাটটি চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচার ইউনিয়নে অবস্থিত। ফেরিঘাটটি মোজাম্মেল গাজীকে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। তিনি একজন স্থানীয় মাদক কারবারি, চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধ বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং থানায় মামলা রয়েছে। বর্তমানে তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ ও ফেরিঘাটে যাতায়াতকারী যানবাহনের চালক ও শ্রমিকরা অতিষ্ঠ এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। অতীতে চাঁদাবাজীর অভিযোগে তার ফেরিঘাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছিল।
এ প্রেক্ষাপটে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে টাদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাটের পার্কিং ইয়ার্ড চার্জ ও টার্মিনাল চার্জের ইজারা বাতিল করে বিআইডব্লিউটিএ নিজস্ব তত্বাবধানে পরিচালনা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি ডিও পত্রে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে এখন থেকে বিআইডব্লিটিএ নিজস্ব তত্বাবধানে সরকার নির্ধারিত নিময় মেনে পাকিং ইয়ার্ড ও টার্মিনাল চার্জ আদায় করবে ।
প্রসঙ্গত, খুলনা-চট্টগ্রামসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন রটের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাট। ২০০১ সালে চালু হওয়া এই ফেরী সার্ভিস ও ঘাট এখন সময়ের পরিক্রমায় বেশ জজমজমাট । কম সময়ে যোগাযোগের জন্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই আঞ্চলিক মহাসড়কের পণ্যবাহী যানবাহন পারাপারের ফেরী ঘাটে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিলো দীঘদিন । কথিত ইজাদারকতৃক প্রতিটি পণ্যবাহী গাড়ি ফেরিতে ওঠার জন্য এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অঅদায় করা হতো । অতিরিক্ত অথ না দিলে দিনের ঘাটে বসে থাকতে হতো পণ্যবাহী যানবাহনকে । দেয়া হতো না ফেরীতে উঠার সিরিয়াল ।
চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরী রুটে ৫/৭টি ফেরি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যাই বেশি । ফেরীর ভাড়া
বিআইডব্লিউটিসির আদায় করে থাকলেও । ফেরি ভাড়ার পাশাপাশি সামান্য টার্মিনাল চার্জ ও পার্কিং ইয়ার্ড চার্জ দিতে হয় যানবাহন প্রতি। এটা আদায় করে ইজারাদারের লোক। ৫০ ও ৬০ টাকার চার্জ আদায় করা হতো ৩শ থেকে ৩ হাজার টাকা । ফেরিঘাটে চালকদের জিম্মি করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো ইজারদার ।
ফেরিঘাটে ইজারাদার কর্তৃক অতিরিক্ত চার্জ আদায় করা নিয়ে দীঘ দিন যাবত প্রতিবাদ করে আসছে এ রুটের পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন মালিক ও চালকরা । এমনকি বিআইডব্লিটিএ ঘাট ব্যবস্থাপকরা ইজারাদার কর্তৃক অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে বিআইডব্লিউটিএ, ইজারাদার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দিলেও কাজের কাজ এতো বছর কিছুই হয়নি । এবার শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে বাতিল হলো দীর্ঘদিনের ইজারা প্রথা ।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট, ২ নভেম্বর ২০২১