আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ডে গ্রামে-গঞ্জে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। ব্যস্ত সময়পার করছেন প্রার্থীরা।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভােটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে মাইকিংয়ে চলছে নির্বাচনী প্রচারণার গান-বাজনা। ভােটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পূর্বে অভিজ্ঞতা থাকলেও অন্য দুই প্রার্থীর তেমন অভিজ্ঞতা নেই। ইসলামী আন্দোলন ও স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থী এ বছর প্রথম নির্বাচন করছেন।
জানা যায়, মেঘনা নদীর ভাঙন কবলিত এ ইউনিয়ন। নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নটিকে অনেক ছোট হয়ে গেছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের মােট ভােটার সংখ্যা ৬ হাজার ৯০৩ জন। এর মধ্য পুরুষ ৩হাজার ৭৭৫ জন এবং মহিলা ভােটার
৩ হাজার ২৮ জন। এ জনপদের মানুষ অনেক ধার্মিক, শিক্ষা-দীক্ষা চাকরি-বাকরি ব্যবসা ও রাজনীতিতে এগিয়ে। অধিকাংশ কৃষি ও মৎস্যের
ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানে অবস্থিত প্রাচীন প্রায় একশ ত্রিশ বছরের পুরানাে হাইস্কুল হরিণা চালিতাতলী অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন এবং মেঘনা নদীর। চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি নৌ-রূটের হরিণা ফেরিঘাট।এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান| পদে এবার ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনােনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুকবুল হােসেন মিয়াজী। এর আগে তিনি দুইবার নির্বাচন করেছিলেন। তার সাথে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতা মােঃ মােজাম্মেল হােসেন টিটু গাজী।
তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। অপরজন হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থিত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হাফেজ মােঃ মনির হােসেন (বাকাউল)। চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন, সাধারণ সদস্য ২৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৬ জনসহ মোট ৩২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এদের মধ্যে ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য গোলাম আলী মিজি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ভােটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি থেকে কোনাে প্রার্থী না থাকায় হানারচরে মূল লড়াই হবে নৌকার সাথে আনারস প্রতীকের।
ভােটাররা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের মােজাম্মেল হােসেন টিটু গাজীর এখানে শক্ত অবস্থান রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা তার পক্ষে কাজ করছে। টিটু গাজীর বাবা লনি গাজী এ ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। এখানে চরমােনাই পীরের দল হাতপাখারও কিছু ভােট রয়েছে। এই ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী আবদুস ছাত্তার রাঢ়ি । এবার দল থেকে তাকে মনােনয়ন দেয়া হয়নি। তবে জয়ের ব্যাপারে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীই আশাবাদী।
ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও বর্তমানে ফুটবল মার্কার প্রার্থী খায়ের বলেন, গত বছরের মত এ বছরও ১১ নভেম্বর ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে ইনশাল্লাহ আমাকে জয়যুক্ত করবেন।
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মহিলা মেম্বার বই মমার্কার প্রার্থী খুরশিদা বেগম বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ করছি। স্বামী ও সন্তানহারা। আমি গতবছরও ভোটারদের ভোটে বিজয়ী হয়েছি। এবছরও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
ইউনিয়নের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩নং ওয়ার্ডের টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী হারুন অর রশিদ বলেন, জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। কারন বিগত সময়ে ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোট আমাকে প্রদান করায় আমি ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তবে ওয়ার্ডের অন্য প্রার্থী আমার নির্বাচনী কাজে বাঁধা দিচ্ছে।
চেয়ারম্যান পদের ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কার প্রার্থী হাফেজ মোঃ মনির হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নের ইসলামী আন্দোলনের যথেষ্ট ভোটার রয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি হলে চরমোনাই পীরের বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মনোনিত হাতপাখা মার্কার ইনশাল্লাহ বিজয় হবে। আমরা ভোটের আগেই দেখছি অন্য ইউনিয়ন থেকে লোকজন এনে হামকি-দমকি দেওয়া হচ্ছে। এই ইউনিয়নের জনগন আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে জোর দাবি জানাই।
ইউনিয়নের স্বতন্ত্র আনারস মার্কার মোজাম্মেল হোসেন টিটু গাজী বলেন, আনারস মার্কার ১২০ জন সমর্থক ও ভোটারের নামের তালিকা করে পুলিশ চৌরাস্তা এলাকায় তাদের নাম প্রকাশ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সমর্থক ও ভোটাররা আতঙ্কিত হচ্ছে। এতে আমার নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে।
টিটু গাজী আরও বলেন, আমার পিতা দীর্ঘদিন এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ইউনিয়নে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান রয়েছে। এ এলাকার সাধারন মানুষ আমাকে ভালোবেসে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সমর্থন দিয়েছে। আমার ব্যাপক জনসমর্থন দেখে ইশ্বার্নিত হয়ে প্রতিপক্ষ সমর্থক ও ভোটারদের হুমকি ধমকি এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করছে। তারা যেনো আমাকে ভোট না দেয় ও আমার পক্ষে কাজ না করে তাই হুমকি দিচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নির্বাচনের রিটার্নীং অফিসার দৃষ্টি আকর্শন করছি। ১১ নভেম্বর হানারচরবাসী ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় নিশ্চিত ইনশাল্লাহ।
ইউনিয়নের নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. মুকবুল হোসেন মিয়াজী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিয়নবাসীর সেবা ও খেদমত করার জন্য আমাকে নৌকা প্রতিক দিয়েছেন। আমি যেন আগামী ১১ নভেম্বর ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি, সেই জন্য যার যার অবস্থান থেকে আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। যেহেতু আমার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে সেই ক্ষেত্রে আমি কোন কেন্দ্রই নিরাপদ মনে করি না।
এই ইউনিয়নের জনগন শান্তি প্রিয়। তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোট দিতে চায়। যদি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট প্রদান করতে পারে তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
প্রতিবেদক : মাজহারুল ইসলাম অনিক, ১ নভেম্বর ২০২১