চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে স্বামী জামাল হোসেনকে ঘুমের ওষুধ ও বালিশচাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ২৪ অক্টোবর রোববার বিকেলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় দেন। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে তাঁর স্বামী জামাল হোসেনের পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া হয়। সন্তানদের সামনে স্বামী ফাতেমাকে মারধর করায় অসম্মানবোধ করেন তিনি। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমা স্বামীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। পরদিন ১৫ এপ্রিল পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টায় জন্ডিসের তরল ওষুধের সঙ্গে ৮টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখেন তিনি। তাঁর স্বামী বাজার থেকে ফেরার পর ওই ওষুধ পান করেন। এরপর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জামাল হোসেন অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে নাকেমুখে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন ফাতেমা।
ঘটনাটি গোপন করার জন্য ফাতেমা পার্শ্ববর্তী অন্য ঘর থেকে তাঁর ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে (১৫) ঘুম থেকে উঠিয়ে তার বাবার মৃত্যুর খবর দেন। ছেলেকে ফাতেমা বলেন দিনে তার পিতার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, যার ফলে তার বাবার মৃত্যুর ঘটনায় সবাই তাদের সন্দেহ করবে। এ জন্য মা ও ছেলে একসঙ্গে বাড়ির পাশে পুরোনো গর্ত করে জামালকে মাটিচাপা দেন।
সকালবেলায় ফাতেমা প্রচার করেন তাঁর স্বামী ঢাকায় চাকরির জন্য গেছেন। বিষয়টি জামাল হোসেনের পরিবারের সন্দেহ হলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে সন্ধান না পাওয়ায় ফাতেমাকে দিয়ে ২৮ এপ্রিল শাহরাস্তি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায়।
এরপর ৩০ এপ্রিল দুপুরে ফাতেমা আক্তার তাঁর স্বামীর নিকটাত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আমির হোসেনের কাছে পুরো ঘটনার বিবরণ বলেন। আমির হোসেন ঘটনাটি শাহরাস্তি থানা-পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়। এবং জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জামাল হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই আমির হোসেন বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় ফাতেমা আক্তার ও তাঁর ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। শাহরাস্তি থানা-পুলিশ ওই দিনই ফাতেমা আক্তার ও তাঁর ছেলেকে আদালতে পাঠান।
গত ছয় বছর ফাতেমা চাঁদপুর জেলা কারাগারে এবং ছেলে জাহিদুল ইসলাম শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে থেকে বর্তমানে জামিনে আছেন। জাহিদুলের মামলাটি পৃথক আদালতে চলমান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সমির মজুমদার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি বদিউজ্জামান কিরণ বলেন, মামলাটি আদালতে ছয় বছর চলমান থাকা অবস্থায় ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামির উপস্থিতিতে বিচারক আজ এই রায় দেন।
শাহরাস্তি করেসপন্ডেন্ট, ২৪ অক্টোবর ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur