Home / সারাদেশ / কুমিল্লায় ইকবালকে খোঁজছে তাঁর পরিবারও!
খোঁজছে
ইকবালের ছোট ভাই রায়হান

কুমিল্লায় ইকবালকে খোঁজছে তাঁর পরিবারও!

কুমিল্লায় পুজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনায় কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক, সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষন ইত্যাদি কারণে যেমন এই ঘটনার রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে, তেমনি প্রতিদিন নতুন নতুন রহস্যেরও জন্ম দিচ্ছে।
সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে প্রাপ্ত মূল সন্দেহভাজন ব্যাক্তি ইকবালকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টিও নতুন নতুন রহস্যের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।

১৩ অক্টোবর থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া আলোচনায় নতুন মোড় নেয় বুধবার জেলা পুলিশের সরবরাহ করা কিছু সিসি টিভির ফুটেজে। ওই ফুটেজে দেখা যায় কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপড়ের দুর্গা পূজা মণ্ডপে যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনকে দেবতার কোলে রেখেছিলেন তাকে শনাক্ত করতে পারে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজে ধরাপড়া ওই ব্যক্তিটির নাম ইকবাল হোসেন।

ওই মণ্ডপের আসপাশ এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করেই ইকবাল নামে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে পুলিশ। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে, সন্দিগ্ধ ইকবাল পলাতক থাকায় কিংবা তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারায় আলোচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

বুধবার সিসি টিভির ফুটেজ দিয়েই খালাস, সাবাদিকদের আর কোনো তথ্যই দেয়নি পুলিশ। পুলিশ তথ্য না দিলেও খোঁজখবর নিয়ে ওই রাতেই ইকবালকে চিহ্নিত করে সাংবাদিকরা তার পরিচয় খুঁজে বের করতে সক্ষম সহয়। ইকবাল নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নূর আহম্মদ আলমের ছেলে।

ওই রাতেই তার বাসায় গেলে তার মা মা-আমেনা বেগম এবং ছোট ভাই রং মিস্ত্রি রায়হানের সাথে। তারা জানান, তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে ইকবাল সবার বড়। তারা জানান, ইকবাল আগে থেকেই নেশায় আসক্ত। ইকবাল পর পর দুই বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে এবং প্রথম সংসার ভাঙার পর ইকবাল ২য় বিয়ে করলে ওই সংসারেও তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

ইকবালের মা-আমেনা বেগম জানান, ‘তিনি স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন ইকবাল পূজামণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা সরিয়ে সেখানে কোরআন শরিফ রেখেছেন। ইকবালের ভাই রায়হান জানায়, তার ভাই নেশয়া আসক্ত বলে যে কেউ যে কোনো কাজ তাকে দিয়ে করাতে পারেন। তাই রায়হান মনে করে ‘ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারে। তবে, ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে লজ্জিত ও মর্মাহত তার মা। তিনি ছেলের কঠিন শাস্তি দাবি করেন।’

এসময় ইকবালের ছোট ভাই রায়হান জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে তার বাবা, ছোটভাই এবং তার মামাও ইকবালকে হন্যে হয়ে খোঁজছে।

অভিযুক্ত ইকবালকে ইতিমধ্যেই মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করা হয়। ফলে, সর্বসাধারণের কাছে একটি প্রশ্ন আরো কঠিন হয়ে দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেকেই বলছেন, ১৩ তারিখের পর অনেককেই আটক করা হয়েছে। অথচ যিনি এই ঘটনায় জড়িত সে যদি মানসিক ভারসম্যহীণই হবেন তাহলে তাকে কেন আটক করা যাচ্ছেনা। তাদের প্রশ্ন সে যদি মানসিক ভাবে অসুস্থই হবে তাহলে সে পালিয়ে যাবে কেন?

বুধবার রাতে ইকবালের ভাই রায়হান ইকবাল সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলো যে, তাকে (ইকবালকে) দিয়ে অনেক কিছুই করানো সম্ভব! তাহলেকি কেউ ইকবালকে দিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, যারা এখন তাকে আড়াল করে রেখেছে? এমন নানান প্রশ্ন এখন বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এই প্রশ্নগুলোকে আরো জোড়ালো করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন ইকবালকে কেউ হয়তো লুকিয়ে রখেছে।

তবে, পুলিশ সুপার বলছেন ইকবাল প্রতিনিয়তই তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। সে নির্দষ্ট কোনো ফোন ব্যবহার না করায় তার অবস্থান চিহ্নত করা যাচ্ছে না। শীঘ্রই পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

এদিকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে কুমিল্লায় আলোচিত পূজামণ্ডপ ও কোরআন নেয়ার ঘটনার দারোগাবাড়ী মসজিদ পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সদরদপ্তরের ডি আই জি (অপরাধ) কে ওয়াই বেলালুর রহমান। এসময় তারঁ সাথে ছিলেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

সকাল ১১টার সময় তারা নানুয়ার দিঘীর পাড়েরর আলোচিত পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং পূজামণ্ডপ সংশ্লিষ্টদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে তারা কোরআন নেয়ার ঘটনার সিসিটিভিওে ফুটেজে দেখা দারোগাবাড়ী মসজিদ পরিদর্শন করেন।

তবে, তারা সাংবাদিকদের সাথে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন এ বিষয়ে সদরদপ্তর থেকে ব্রিফিং দেয়া হবে।

প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২১ অক্টোবর ২০২১