দিনে প্রচণ্ড গরম আর রাতে ঠান্ডা। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে এমন রোগীর সংখ্যা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আতঙ্কিত না হয়ে শিশু ও বয়স্কদের আরও যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে ভর্তি হওয়া কয়েকজন শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি-ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অভিভাবকরা। যাদের মধ্যে অনেকেই চারদিন, পাঁচদিন আবার কেউবা ছয়দিন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে কারও কোনো আক্ষেপ না থাকলেও পর্যাপ্ত বেড না থাকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। দিনের বেলা প্রখর রোদ এবং অতিরিক্ত রোগী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের ভেতরের তাপমাত্রাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছ। অতিরিক্ত গরমে হাসপাতালে অবস্থান করা কিছুটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলেও জানান অভিভাবকরা।
এ সময় শিশুদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে রোগীর স্বজনদের কোন প্রকার অসন্তুষ্টি না থাকলেও হাসপাতালের বাথরুম ও সার্বিক পরিবেশ নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহানারা বেগম জানান, রোগীর চাপ বেশি হলেও সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় অনেককেই করিডোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসায় কোন গাফিলতি হচ্ছে না।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাক্তার আসমা বেগম জানান, এ সময় শিশুদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে এবং অভিভাবকদের আরও সাবধান হতে হবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বেশিরভাগ শিশুই জ্বর-ঠান্ডা-কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এটি মূলত সিজনাল ফ্লু। বিষয়টিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই সময় বাচ্চাদের একটু জ্বর জ্বর ভাব, ঠান্ডা-কাশিসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে মায়েদের সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাদেরকে ধুলোবালিতে যেতে দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন বাচ্চাদের গোসল করাতে হবে। কোনোভাবেই বাচ্চারা যেন না ঘামায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত ঠান্ডা-কাশি বা জ্বর হলে বাচ্চাদের অনেক কিছু দিয়ে ঢেকে রাখি কিন্তু ওদেরকে একটু খোলামেলা রাখা উচিত। বিশেষ করে অনেক অভিভাবকই বাচ্চাদের মাথায় বেশি বেশি পানি দেয়। আমরা এখন মাথায় বেশি পানি দিতে নিষেধ করে থাকি। যদি বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ মনে হয় তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, তবে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।’
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম মাহবুবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা বেশি। যার মধ্যে বেশির ভাগই আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। তবে পর্যাপ্ত বেড না থাকলেও রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। হাসপাতালে পর্যাপ্ত মেডিসিন মজুদ রয়েছে, তাই যখন যা কিছুর প্রয়োজন তাই রোগীদের দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ৩১ বেডের বিপরীতে বর্তমানে ৮১ জন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে।
চাঁদপুর করেসপন্ডেট