থাকেন মালয়েশিয়ায়। ছবি ও নাম দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলেছেন সৌদি প্রবাসীর। দুই যুবককে ফাঁদে ফেলে প্রবাসে নেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। বলছিলাম বর্তমান মালয়েশিয়া প্রবাসী চাঁদপুরের কচুয়ার দক্ষিন মাঝিগাছা গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে প্রতারক সোহাগ হোসেনের কথা।
সোহাগ হোসেন কচুয়া উপজেলার আলিয়ারা গ্রামের মৃত. হাবিব উল্যাহ মেম্বারের ছেলে সৌদি প্রবাসী মো. নুরুল ইসলামের ছবি ও নাম ব্যবহার করে হুবহু আরেকটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে প্রবাসে বসে নতুন কৌশলে সেঙ্গুয়া গ্রামের দুই যুবককে সৌদিতে পাঠানোর কথা বলে মোটা অংক অর্থ হাতিয়ে নেয়।
অবেশেষে প্রতারণার শিকার হয়ে ওই যুবকের বাবা আমিন মিয়া ও প্রবাসী নুরুল ইসলামের ভাই তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সম্প্রতি প্রতারক সোহাগের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রতারণার শিকার কচুয়া উপজেলার সেঙ্গুয়া গ্রামের জাহিদ হাসানের মা তাছলিমা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, নুরুল ইসলাম আমার চাচা হন। তিনি খুবই ভালো মনের মানুষ। মাঝিগাছা গ্রামের জনৈক প্রতারক সোহাগ আমার চাচার ছবি দিয়ে তার নামে একটি ফেসবুক আইডি খোলায় আমার ভাই ওমান প্রবাসী জিসান ওই নাম্বারে ফোন দেয়। তাকে ফোন দিলে প্রতারক সোহাগ সে নিজেকে নুরুল ইসলাম বলে পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলে জিসানের ভাগিনা জাহিদ ও চাচাতো ভাই শাহপরানকে সৌদিতে নেয়ার কথা বলে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
পরে জাল ভিসা পাঠায় তাদের কাছে। কবে বিদেশ পাঠাবে জানতে চাইলে একই এলাকার মাঝিগাছা গ্রামের দালাল কালাম ভূঁইয়া তাদের কার কাছে বিদেশে যাওয়ার ভিসার টাকা দিয়েছেন এবং কি ভিসা দিয়ে বিদেশ যাবেন এমন উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করলে বিষয়টির মূল গোমর ফাঁস হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে দালাল কালাম ভূঁইয়ার স্বীকারোক্তিতে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় প্রতারক সোহাগের নাম ঠিকানা বের করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়।
জাহিদ হাসানের মা তাছলিমা আক্তার আরো জানান, আমি তিন সন্তান ও স্বামী নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছি। এনজিও সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে সোহাগকে এ টাকা দিয়েছি। আমি আমার ছেলের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসন সহ সকলের সহযোগিতা চাই।
জাহিদের বাবা আমিন মোল্লা ও শাহপরানের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরল বিশ্বাসে সোহাগের প্রতারনায় শিকার হয়েছি। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে বড় বিপদে আছি। আমাদের কষ্টের টাকা উদ্ধারে সকলের সহযোগিতা চাই।
সৌদি প্রবাসী মো. নুরুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমি দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর সৌদি আরব রয়েছি। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় এবং পারিবারিক কারণে এলাকায় আমার সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে। আমি কয়েক বছর পরপর ছুটিতে এলাকায় যাই। সম্প্রতি পাশ্ববর্তী মতলব থানায় বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমার সাথে এক কলিক থাকায় প্রতারক সোহাগ কয়েক বছর আগে আমার কাছে মাঝে মাঝে ফোন দিত এবং বিভিন্ন খোজঁখবর নিত। বর্তমানে আর ফোন দেয় না। এর মধ্যে জানতে পারলাম সোহাগ আমার ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেসবুক খুলে প্রবাসে নেয়ার নাম করে আমার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার কিছু নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছ্ইু জানি না। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলামের বড় ভাই মো.তাজুল ইসলাম জানান, আমার ভাইয়ের ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেসবুক খুলে প্রতারনায় করায় আমরা সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। ন্যায় বিচার চেয়ে প্রতারক সোহাগের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
এদিকে অভিযুক্ত দক্ষিন মাঝিগাছা গ্রামের অধিবাসী সোহাগের বাবা জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় স্থানীয় ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। শুনেছি আগামী শনিবার ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক বসবে। আমি আমার ছেলের কুকর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করছি এবং পাওনাদারের টাকা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করছি।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ১৮ আগস্ট ২০২১