মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য চাঁদপুরের প্রত্যেক উপজেলায় নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি হচ্ছেন সমস্ত রোগীরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা সেবার জন্য ভর্তি না হওয়ার কারণ আড়াই শ শয্যা এই হাসপাতালে দিন দিনই রোগীদের চাপ বাড়ছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে করোনা ভাইরাস প্রভাবের প্রথম থেকেই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালসহ প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ টি বেড ব্যাতীত অন্যান্য উপজেলা গুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২০টি করে বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চাঁদপুরে মহামারী করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্তের প্রথম থেকে চাঁদপুরের এই হাসপাতালটির তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে আইসোলেশন ওয়ার্ডে বেড সংকট দেখা দেয়ায়, ওই ভবন থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ড বেড বাড়িয়ে হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডকে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর পরবর্তীতে করোনার দ্বিতীয় ধাপে চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ রোগীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকায় হাসপাতালের ২য় তলার ৬০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ডেও বেড সংকট দেখা দেয়া যায়,সেটিকে আরো বাড়িয়ে ৩য় তলার শিশু এবং পুরুষ ওয়ার্ডকেও আইসোলেশনে ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। চাঁদপুরে হঠাৎ করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় দেখা গেছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে এতগুলো বেড বাড়ানোর পরেও রোগীদের চাপে আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাহিরেও কড়িডোরে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন… চাঁদপুরে আইসোলেশন ইউনিটে বাড়ল আরও ৬০ শয্যা
এর মূল কারণ হচ্ছে জেলার সমস্ত করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গের রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লোক্স গুলোতে ভর্তি না হয়ে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশনেই ভর্তি হচ্ছেন।
অথচ খবর নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে করোনা সংক্রমনের প্রথম থেকেই সরকারি জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২০টি বেড, শাহরাস্তি ২০টি, কচুয়া ২০টি, হাজিগঞ্জ ২০টি মতলব উত্তর ২০টি, মতলব দক্ষিণে ২০টি, হাইমচরে ১০ টি বেডসহ ৭ উপজেলায় সর্বমোট ১৩০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে।
এতে গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত শুধমাত্র শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১১ জন রোগী ভর্তি ছিলো বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কচুয়া এবং শাহরাস্তি উপজেলায় কয়েকজন রোগী প্রথমে ভর্তি থাকলেও দু একদিন পরেই তারা স্ব-ইচ্ছায় ওয়ার্ড ত্যাগ করে বাড়িতে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা গুলোতে বেড নির্ধারিত করা থাকলেও সকল বরোনা রোগীরা ভালো সেবা পাওয়ার চিন্তায় চাঁদপুর সদরে এসেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ফোকাল পার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন,প্রত্যেক উপজেলার রোগীরাই মনে করেন যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান অনেক ভালো।
তারা ভাবেন এখানে যে সেবাটা তারা পাবে সেটি হয়তো উপজেলা গুলোতে পাবেনা। সে চিন্তা থেকেই তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যার কারণে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অনেক চাপ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন আমি রোগীদের উদ্দেশ্যে বলবো, সরকারি হাসপাতালের মতোই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ভালো মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তাই আপনারা উপজেলার লোকজন যদি সেখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নেন তাহলে জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অনেকটা চাপ কমে আসবে।
একই কথা জানালেন চাঁদপুর চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ছাড়াও শুধুমাত্র হাইমচর উপজেলার দশটি বেড ব্যাতীত প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের আইসোলেশনে ২০টি করে বেড প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু রোগীরা সেখানে ভর্তি না হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। রোগীরা মনে করেন উপজেলা গুলো থেকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বেশি ভালো তাই তারা সেখানে চিকিৎসা সেবা না নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালমুখী হচ্ছেন।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি,৩০ জুলাই ২০২১