রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর ঠাঁই নেই। একদিক দিয়ে মরদেহ বের করা হচ্ছে, আরেকদিক দিয়ে জরুরি রোগীর ভিড় বাড়ছে। কেউ আবার আইসিইউ না পেয়ে ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। কেউ আবার সিট পাওয়ার আসায় অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অপেক্ষা করছেন কেউ রিলিজ নিয়ে বাসায় গেলে সেই সিটটা যদি কপালে জোটে। সেই সঙ্গে আছে স্বজনদের আহাজারি। বুধবার (২৮ জুলাই) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগের সামনে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
বুধবার বিকালে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি মরদেহ। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে চারপাশ। যিনি মারা গেছেন, তার নাম স্বপন কুমার সাহা (৮৫)। গোপালগঞ্জের মোকছেদপুরের বাসিন্দা। মৃতের মেয়ে বিউটি সাহা বলেন, ‘আমার বাবা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। প্রথমে তাকে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিলে সেখান থেকে চিকিৎসকরা দ্রুত আইসিইউতে নেওয়ার কথা জানান। তখন তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন রেখে গতকাল ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করি। এখানে আইসিইউ না পেয়ে তাকে রাখা হয় সিসিইউতে। চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ বুধবার বিকাল তিনটায় বাবার মৃত্যু হয়।’
একই সময়ে দেখা হয় মিরপুরের মধ্যপাইকপাড়ার বাসিন্দা সোহেল মিয়ার সঙ্গে। তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩০) পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তার ওপর এখন শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্ট। পরে কোনও উপায় না পেয়ে প্রথমে স্থানীয় ডেলটা হাসপাতালে নিয়ে যান সোহেল মিয়া। সেখানে রাখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সেখান থেকে টেকনিক্যালস্থ ডায়াবেটিস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। সেখানেও একই অবস্থা। পরে সেখান থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেন স্বামী। সেখান থেকে বিকালে ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়ে আসেন। এখানে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করানোর পরে ওয়ার্ড বয়রা তাকে অক্সিজেন দিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যান।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা ইউনুস মিয়া (৬৩)। আজ সকালে তাকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা। রোগীর জামাতা মো. ফারুক জানান, এখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ছিলেন তিনি। বিকালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার আইসিইউতে নিতে হবে। কিন্তু এখানে আইসিইউ না পেয়ে বিকালে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছেন।
করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগে ভর্তির রেজিস্টার সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
করোনা ইউনিটের একটি ওয়ার্ডের বয় জানান, তাদের ওখানে কোনও সিট ফাঁকা নেই, কিন্তু রোগীর চাপ খুবই বেশি। তাই হাসপাতাল পরিচালকের নির্দেশে অতিরিক্ত সিট বসিয়ে অনেক রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।
একই ইউনিটের আরেকজন নার্স জানিয়েছেন, যেসব রোগীর এক থেকে দুই লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, তাদের সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যাদের বেশি লাগছে তাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তারপর যাদের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়, তাদের হাইফ্লো মেশিনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে কোনও রকম বেড ফাঁকা থাকছে না। একটি বেড ফাঁকা হতেই আরেকজন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৬৭ জন। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’ রোগীর স্বজনরা আইসিইউ না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করছেন জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এটা এখন সোনার হরিণ। এখানে তো সিরিয়াল লেগেই থাকে। একটি সিট ফাঁকা হতেই সিরিয়াল দেওয়া রোগীদের স্থানান্তরিত করা হয়। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। খারাপ রোগীদের জন্য সিটের বাইরেও অনেক রোগী ভর্তি দিয়েছি। তাদের শেয়ার করেও রাখছি।’
অনলাইন ডেস্ক, ২৯ জুলাই ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur