সিংহাসনে ৭০ বছর সুদীর্ঘ সময়। বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে গোটা বিশ্বে আগ্রহের কারণ। ব্রিটেনের অনন্য প্রতিচ্ছবি জীবন্ত কিংবদন্তি রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
সিংহাসনে হীরকজয়ন্তীর মাইলফলক স্পর্শ করে অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন ইতিমধ্যেই। ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। রাজসিংহাসন শাসনে ৭০ বছরে পা দিয়েছেন মহারানী। এ দীর্ঘ সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি।
ব্রিটেনের দ্বিতীয় এলিজাবেথ হচ্ছেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র । কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান রাণী ও রাষ্ট্রপ্রধান। কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলো হলো : যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোস, বাহামাস, গ্রানাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্রস ও নেভিস।
কমনওয়েলথ প্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এরই মধ্যে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্ণ করেছেন।
ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি সমর্থ হলেন এ বিরল দীর্ঘতম সময়কে ছুঁয়ে দিতে। এর আগে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার। ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন ভিক্টোরিয়া। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ অবধি রাণীর আসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ।
রাণীর সিংহাসনের হীরকজয়ন্তী পালনের অভিজাত এ বিশেষ স্মারক বইয়ে উঠে এসেছে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন রাজ্যের নানা ছবি,অজানা কথামালা। প্রতি সপ্তাহে রাণী এলিজাবেথের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের নিয়মের মধ্যে পড়ে। আর এ বিশেষ সময়টুকু সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘ব্রিটিশ রাজনীতির বাইরে,হাঁফ ছেড়ে অনন্য দুর্লভ সময়টুকু তাঁর কাছ থেকে পাই। এমন কোনো বিষয় নেই তাঁর স্বচ্ছ আয়ত্তে নেই।
ব্রিটিশ রাজনীতি কোন পথে হাঁটছে, সবই তাঁর নখ-দর্পণে, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির খুঁটিনাটি বিষয় তাঁর নজরে আছে। আর সেটি আবছা নয়,বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। সুদীর্ঘ ছয় দশক বিশ্ব অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে; প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থেকে রানী এলিজাবেথ মানুষের কল্যাণে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬। পিতা ষষ্ঠ জর্জ ও মাতা এলিজাবেথ বউয়েস। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। আর সে সময় ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের অদ্ভুত একটি দিনে জীবনটা বদলে যায় এ রাজকন্যার। সুদূর কেনিয়ায় বসে সেদিন শোনেন পিতা ব্রিটিশ রাজ ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু সংবাদ। সে দুঃখ-ভারাক্রান্ত হদয়ে সেদিনই তিনি জেনে গিয়েছিলেন রাণী হওয়ার সংবাদ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর মাথায় উঠে রাজমুকুট। রাণী হলেন এলিজাবেথ, সে থেকেই ব্রিটেনের জনগণের ভালোবাসা, শ্রদ্ধায় রাণী হয়েই কাটিয়ে দেন এতগুলো বছর।
ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এ বিরল দীর্ঘতম সিংহাসনে আসীন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি রাজসিংহাসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ। তাঁর আমলে ব্রিটেনে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ জন প্রেসিডেন্ট ও ছয়জন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি সফর করেছেন পৃথিবীর ১১৬টি দেশ। এলিজাবেথের দাম্পত্যসঙ্গী হলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরা। তাদের চার সন্তান রয়েছে- চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রন্ড এবং অ্যাডওয়ার্ড। ১৯৪০ সালে এলিজাবেথ প্রথম রেডিও বিবিসিতে শিশুদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রথম জনসম্মুখে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলা তাঁর জন্য খুব মসৃণ ছিল না।
টেমসের জলধারার সঙ্গে সঙ্গে অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। সব কিছুর পরও রাণী হচ্ছেন ব্রিটিশ জাতির ঐক্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক। বরাবরের মতোই রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ দু’টি জন্মদিন উদযাপন করেন। তাঁর প্রকৃত জন্মদিন হলো ২১ এপ্রিল এবং অফিসিয়াল জন্মদিন জুন মাসের দ্বিতীয় শনিবার। জন্মদিন উপলক্ষে রাজকীয় পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজকীয় ভোজের পাশাপাশি নানা রকম পানীয়র ব্যবস্থা থাকে। অ্যালকোহলের মধ্যে ‘জিন’ রাণীর পছন্দের শীর্ষে। জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর ২১ এপ্রিল বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে রাণীকে একনজর দেখার অপেক্ষায় আমজনতা হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
কেউ দেখা পান, কেউ ব্যর্থ মনোরথেই বাড়ি ফেরেন। তবে দুনিয়াজুড়ে গণতন্ত্রের পালে হাওয়া লাগলেও এখনো তিনি রাজতন্ত্রের পতাকা উড়িয়ে ঠাঁই বসে আছেন। বিশ্ব ইতিহাসে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনকালই দীর্ঘতম।
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ৮৮ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল আদুল্যদুর মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনি বিশ্বের প্রবীণতম শাসকও বটে। উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে তেরেসা মে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পা রেখেছেন ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী।
ওয়াল থেকে সংগ্রহীত : আবদুল গনি , ১৬ জুলাই ২০২১