রাজধানীতে করোনার পাশাপাশি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। গত মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭১ জন। আর চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১০ দিনে রোগীর সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। মাসের শুরুতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৮ জনে। রাজধানীর বাইরের হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন।
১০ জুলাই শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসানসহ একাধিক স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, করোনার উচ্চ সংক্রমণকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
তারা বলেন, বর্তমানে বর্ষাকাল অর্থাৎ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রজননকাল। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে। নির্মাণাধীন ও পরিত্যক্ত ভবন, বাসার ছাদ, আঙিনা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার এবং ফ্রিজ-এসির পরিষ্কার পানি জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশা জন্মে। তাই পরিষ্কার পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন না বাড়ে সে লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন এলাকা ও বাড়ি বাড়ি ঘুরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ৬৭৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭১ জন এবং ১০ জুলাই পর্যন্ত ৩০২ জন রোগী ভর্তি হন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৯৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৮ জন রোগীর মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ট হাসপাতালে ১১ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঁচজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) একজন, বাংলাদেশ মেডিকেলে একজন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে আটজন, স্কয়ার দুইজন, ল্যাবএইডে দুইজন, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ধানমন্ডিতে তিনজন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে দুইজন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, কাকরাইলে দুইজন, খিলগাঁও খিদমা হাসপাতালে একজন এবং আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচজন, আজগর আলী হাসপাতালে একজন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে একজন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে একজন, পপুলার হাসপাতালে একজন এবং আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর আতঙ্কে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ কার্যত ঘরবন্দি হয়ে আছে। মহামারিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। শনিবার (১০ জুলাই) পর্যন্ত রাজধানীতে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৪৬৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এবং আট হাজার ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ, ১০ জুন ২০২১