চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌর এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে মো. নুরুল আমিন (৬৫) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সমাজসেবা কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। এসময় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন নুরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার (৫৫)।
১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে শাহরাস্তি উপজেলার পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ড নাওড়া গ্রামের(রেল ক্রসিং সংলগ্ন) আমিন সাহের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নূরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার (৫৮) গুরুতর আহত অবস্থায় সকালে পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকা একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
পুলিশ প্রশাসন ও প্রত্যাক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে নাওড়া পাটওয়ারী বাড়ি মসজিদের সভাপতি শামছুল আলমের কাছে নিহতের মেজো মেয়ে কল করে জানান বাবার ফোন বন্ধ রয়েছে।
ওই সময় শামছুল আলম বাড়িতে গিয়ে দেখেন প্রধান ফটকে তালা মারা। এ সময় তার সাথে থাকা শামসুল আলম নামে এক যুবক ৯৯৯ নম্বরে কল করে জানায়। ঘটনাস্থলে ভবনের জানালা দিয়ে নিহতের স্ত্রীকে আহত অবস্থায় দেখতে পায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শাহরাস্তি থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল মান্নান খবর পেয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করার কথা বললে তারা পুলিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। পুলিশ এসে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে গুরুতর আহত কামরুন্নাহারকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য এম্বুলেন্স যোগে ঢাকা প্রেরণ করে।
নিহত নূরুল আমিনের লাশ ভবনের ছাদে পাওয়া যায়। ওই সময় তার মুখে পায়ের মৌজা ও মাথায় কোপ দেয়ার আঘাত দেখতে পায়। এমনকি তার শরীরের সকল স্থানে পোকামাকড় দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত নূরুল আমিন নাওড়া পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ৭-৮ বছর পূর্বে বড়ুরা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী একই কার্যালয়ে কর্মরত থেকে ৬ মাস পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত হন। ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করে। অবিবাহিত ছোট মেয়ে তার ভাইয়ের বাসায় ছিলেন।
এই বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের বন্ধু শামছুল আলম বলেন, মেজো মেয়ের কল পেয়ে দ্রুত তার বাড়িতে যাই ও পুলিশকে জানাই।
ছোট মেয়ে মিলি জানায়, ২৯ জুন মঙ্গলবার বাবার সাথে কথা হয়। আমার জন্য ব্যাংক থেকে ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
শাহারাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দল মান্নান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নুরুল আমিনের মরদেহ একতলা বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার করে এবং তার স্ত্রীকে ঘরের মধ্যে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের ঘরে সমস্ত জিনিসপত্র সঠিকভাবে আছে। কোনো কিছু এলোমেলো নাই, ডাকাতি হয়েছে বলেও মনে হয় না।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি খুবই রহস্যজনক। চাঁদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, পিবিআই, সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশের চারটি ইউনিট গভীরভাবে ঘটনাটি তদন্ত করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় বলেন, নুরুল আমিনের মাথায় ও মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং গলায় দাগ রয়েছে। ক্ষত জায়গায় পচন ধরেছে। মনে হচ্ছে ঘটনাটি দু-তিনদিন আগের। এ মুহূর্তে আর বিশেষ কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রতিবেদকঃ মো.জামাল হোসেন,১ জুলাই ২০২১