রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের দিন বিকেলে স্ত্রী মৌসুমী আক্তারকে ভিডিও কলে বলেছিলেন সোমবার বাড়ি ফিরবেন। সন্ধ্যার পরে পিতাকে জানিয়েছেন একই কথা। লকডাউনে শর্মা হাউস বন্ধ থাকবে তাই বাড়িতে লম্বা সময় কাটাবেন সবার সাথে। মগবাজার বিস্ফোরণে ক্ষত বিক্ষত ওসমান গণী তুষার আহত হয়ে হাসপাতালে রাতেই মৃত্যুর আলিঙ্গনে পরদিন সকালে বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে।
লোকারণ্য বাড়িতে শুধুই শোকের মাতম। স্ত্রী মৌসুমী বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। মা তাসলিমা বেগম ও বোনদের কান্নার ধ্বনি আর আহাজারিতে শোকের এক করুণ আবহ ফুটে উঠেছে শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে নিহতের বাড়িতে। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে স্তব্ধ পিতা আনিসুর রহমান নয়ন।
ঢাকার মগবাজারের বিস্ফোরণে নিহতদের একজন ওসমান গণী তুষার বিস্ফোরণস্থল শর্মা হাউসে কাজ করতেন। ঘটনার দিন বিকেলে শিশু কন্যা সুবাহানা তাইয়েবাকে নিয়ে শর্মা হাউসে এসেছিলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার জান্নাত। পার্শবর্তী এলাকার হওয়ায় জান্নাত ভাই ডাকতেন তুষারকে।
তুষারের চাচা মোঃ তাজুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, বিস্ফোরনের পর নিজের আহতাবস্থার কথা ভুলে শিশু সুবহানাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন তুষার। পরদিন সকালে একই গাড়িতে তুষারের লাশ গ্রামের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে রামগঞ্জের ভাটরায় নিয়ে যাওয়া হয় জান্নাত ও সুবহানার লাশ। মুমূর্ষু অবস্থায় ৯ মাসের একটি শিশুকে বুকে জড়িয়ে তুষার হয়তো নিজের স্ত্রীর গর্ভে থাকা ৪ মাসের অনাগত শিশুকেই স্পর্শ করছিলেন এমনটি ধারণা চাচা তাজুল ইসলামের।
তুষারের মামা উপজেলার ফেরুয়া গ্রামের মোঃ আলী হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, তুষার একজন কোরআনে হাফেজ ছিলেন। পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে শর্মা হাউসে কাজ করতেন।
আরও পড়ুন… একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মায়ের বিলাপ থামছেই না
বড় বোন তাহমিনা আক্তার নাজনীন (২৬) জানান, তার ভাই মাত্র ৮ মাস আগে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার নরপাইয়া গ্রামে বিয়ে করেছেন। তুষারের স্ত্রী ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের মুখ না দেখেই তার তুষার পরপারে চলে গেল।
পিতা আনিসুর রহমান নয়ন জানান, অল্প কয়দিন আগে তুষার আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে অপারেশন করিয়েছিল। আমি আগে প্রবাসে ছিলাম, বর্তমানে বেকার। তুষারই আমার সংসারের হাল ধরেছিলো। সোমবার সকালে নিজ হাতে আমার স্বপ্নকে কবরে শুইয়েছি।
তুষারের মা তাসলিমা বেগম আর্ত কন্ঠে বলেন, রমজানের ঈদের ছুটি শেষে আমার বাবা (তুষার) ঢাকা গিয়েছে। লকডাউনে বাড়ি আসবে বলেছিল। আমার বাবা বাড়িতেই (কবরস্থানে) ঘুমিয়ে থাকবে, মাকে আর মা বলে ডাকবে না।
তুষারের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, ঘটনার দিন বিকেল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিডিও কলে তুষার আমার সাথে সংযুক্ত ছিলো। পরদিন বাড়ি আসবে বলেছিল। তার আসাটা এত করুণ হবে ভাবতে পারিনি।
শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা নোয়াখালীর সপ্তগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান আনসারী জানান, তুষার একজন বিনয়ী ও সজ্জন যুবক ছিল। তার মৃত্যুতে গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রতিবেদক:মো.জামাল হোসেন,২৯ জুন ২০২১