Home / বিশেষ সংবাদ / কিশোরগঞ্জে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
কিশোরগঞ্জে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

কিশোরগঞ্জে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

Tuesday, ‎July ‎28, ‎2015  09:10:58 PM

চাঁদপুার টাইমস, কিশোরগঞ্জ:

ধনীর বাড়ির বিয়ে অথবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র না পেয়েও তারা ছুটে যান। দুটো ভাত তরকারির জন্য ঠেলাঠেলি কিংবা গলা ধাক্কা খেতে হতো। কখনো বা দাওয়াতি মেহমানদের খাবারের পর যদি খাবার থাকে তাহলে তাদের দুই মুঠো খাবার জোটে যেমন তেমন পলেথিনের প্যাকেটে। সেই পলেথিনের প্যাকেটে তাদের কখনো ভাত-ডাল দেয়া হলেও তাতে থাকেনা মাংস। এভাবেই হাত পেতে যাদের জীবন-জীবিকা চলতো আজ তাদের এবার রীতিমতো দাওয়াত করে ডেকে এনে বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেবিল-চেয়ারে বসিয়ে খাওয়ানো হলো। শুধু সন্মানের সাথে খাওয়ানো নয় তাদের সকলের হাতে একটি করে রজনীগন্ধার ষ্ট্রীক দিয়ে বরণও করে নেয়া হয়।

সোমবার দুপুরে নীলফামারীর শিল্প প্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ান আহসান হাবিব লেলিন এমন একটি ব্যাক্তিক্রম দাওয়াতের আয়োজন করেন এই জেলার ভিক্ষুকমুক্ত কিশোরীগঞ্জ উপজেলার ভিক্ষাবৃত্তি পরিহারকারী দেড় হাজার নারী পুরুষের প্রীতিভোজের মাধ্যমে।

নীলসাগর গ্রুপের কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত অনুভব সেভিংস এন্ড কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্যাম্পাসে এই আয়োজন করা হয়।

এই আয়োজনে ওই উপজেলার দেড় হাজার ভিক্ষাবৃত্তি পরিহারকারীদের সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন নীলফামারী ৪ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় হুইপ আলহাজ্ব শওকত চৌধুরী,উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর দুইটি ইউনিট সাংবাদিক সহ বিভিন্ন স্থরের মানুষজন।

বিশাল সাজসজ্জার এই দাওয়াতি অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল দেখে এক সময়ের এই ভিক্ষুকরা হতবাক হয়ে পড়েন। দাওয়াত খেতে আসা উপজেলার রনচন্ডি গ্রামের আমজাদ হোসেন(৬৫) বলেন যখন ভিক্ষা করতাম তখন কোন দাওয়াত বাড়িতে চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত পাইনি। পেটের ভোগের তাগিদে ওই সব দাওয়াতি অনুষ্ঠানে ছুটে যেতাম। পেতাম গালমন্দ ও গলা ধাক্কা। কেউবা দিতো মেহমানদের খাওয়া শেষে পড়ে থাকা ভাত ডালের পলেথিনের যেমন তেমম একটা প্যাকেট। কোন দিন টেবিল চেয়ারে বসে পোলাও মাংস খাওয়ার ভাগ্যে জুটেনি। আজ এমন খাওয়া খেলাম যা জন্মের পরে বাপ দাদারাও আমাকে খাওয়াতে পারেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন যখন দাওয়াত পত্র নিয়ে এই দাওয়াতি অনুষ্ঠানে এলাম তখন আমাকে সহ অন্য যে ভিক্ষুকরা এসেছে তাদের একটি করে হাতে ফুল দিয়ে বরন করে নেয় নীলসাগর গ্রুপের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তখন ভাবছিলাম এটাকি স্বপ্ন দেখছি না বাস্তবতা। নিজের শরীরে চিমটিও কাটি। সরেজমিনে দেখা যায় চেয়ার টেবিলে প্লেট গ্লাস এক সময়ের এই ভিক্ষুকদের পোলাও ,বুটের ডাল,মুরগীর রোষ্ট,গরুমাংস,খাসিরমাংস,ডিম,টিকিয়া,সালাত,লেবু,দই মিষ্টি ও কোল্ডডিংকস খেতে।

দাওয়াত খেতে আসা কিশোরীগঞ্জ সরকারপাড়ার মৃত মহিমুদ্দিনের বিধবা স্ত্রী আবাদন বেওয়া(৬০) বললেন মোর জীবনে এতো ভালা খাওয়া দেখোনি। আইজ শুধু দেখাদেখি নোহায়। দেখিনু আর খানু। আইজ মোর জীবন সার্থক হইল বাহে।

আনোয়ার বেওয়া(৫৮), রেখা বেওয়া(৬২) আবুল হোসেন বলেন(৬৮) বললেন হামরা তো বছরে কুরবানি ঈদত গোস্ত খাই। আর মাঝেমধ্যে এলাকায় বিয়া কিংবা মরার ফত্যা (কুলখানি) হলে সেটি যাইয়া খাইতাম। সারাদিন খাড়া হইয়া থাকার পর বিকালের দিকে দুই মুট খাবার জুটিছিল। তাও আবার ঠিকমত গোস্ত পাইতাম না। আজগা খালি প্যাট ভরা খাইনি, মনও ভইরে গেছে।

শিল্প প্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ান আহসান হাবিব লেলিন বলেন, নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলাকে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক ভিক্ষুক মুক্ত ঘোষনা করা হয়েছিল এক বছর আগে। এ জন্য উপজেলা পরিষদ তাদের বিভিন্নভাবে পুনঃবাসনের ব্যবস্থাও করেছেন। তিনি বলেন, এদের নিয়ে চিন্তা করলাম যে এই উপজেলার প্রায় দেড় হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিলেও এদেরতো কোনো বিয়ে বাড়ি অথবা বড় কোনো অনুষ্ঠানে কেউ দাওয়াত করে খাওয়াননি। তাই এই আয়োজন করেছি। ভাবছি প্রতি বছর এদের একদিন করে এ ভাবে দাওয়াত করে খাওয়াবো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিশোরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই উপজেলা ভিক্ষাবৃত্তি পরিহারকারী গরিব ও ভিক্ষুকদের জন্য নীলসাগর গ্রুপ যে ব্যবস্থা করেছেন তা সত্যিই একটি ভালো উদ্যোগ এবং দেশের একটি মডেল হওয়ার মতো ঘটনা।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জুলাই কিশোরীগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষনা করা হয়। সে সময় থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় হাজার নারী পুরুষ ভিক্ষুক কে ছাগল গরু ভেড়া,হাঁসমুরগী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তাদের সদস্য করে তাদের পুনঃবাসন করে দেয়া হয়েছে। এতে তারা আজ সকলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

চাঁদপুর টাইমস ডিএইচ/২০১৫।

চাঁদপুর টাইমস ডট কম প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদআলোকচিত্রভিডিওচিত্রঅডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি