ভালোবাসা মানে না জাত, ধর্ম কিংবা বর্ণ। চাঁদপুরের আপন দুই ভাইকে ভালোবেসে এমনটি প্রমাণ করলো আমেরিকান দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারী। তারা বাংলাদেশের দুই যুবককে ভালোবেসে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাঁদপুরে অবস্থান করছেন।
এদের মধ্যে একজন আমেরিকান নাগরীক ফাতেমা মোহাম্মদ মুসার ১০ বছর আগে বিয়ে করেন মালয়েশিয়া প্রবাসী চাঁদপুরের আবু জাফরকে। বর্তমানে তিনি স্বামীকে নিয়ে আমেরিকায় সুখে-শান্তিতে দাম্পত্যজীবন পাড় করছেন।
এবারে ফাতেমা মোহাম্মদ মুসার ঘনিষ্ঠ বান্দবী আবু জাফরের বড় ভাই শাহাদাত হোসেনকে ভালোবেসে ছুটে আসলেন বাংলাদেশে। তিনিও ধর্মীয় রিতিনীতি মেনে বাংলাদেশের আচার-আয়োজনে বেশ ধুমধাম করে বিয়ে করেন চাঁদপুরের যুবক শাহাদাতকে।
৫ জুন দুপুরে চাঁদপুর সদরের আশিকাটি ইউনিয়নের রালদিয়া গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
এই বিয়েকে কেন্দ্র করে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই দুই দম্পতিকে এক নজর দেখার জন্য চাঁদপুর সদরের রালদিয়া গ্রামের প্রধানিয়া বাড়িতে শত শত নারী পুরুষ ভিড় করছেন।
৬ জুন রোববার সকালে এই প্রতিবেদক ছুটে যান চাঁদপুরের রালদিয়া গ্রামে। সেখানে কথা হয় চাঁদপুরের দুই যুবক ও আমেরিকান দুই নারী দম্পতির সাথে।
বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী আবু জাফর জানান, তারা ৫ ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই দীর্ঘ সময় মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন। মালয়েশিয়া থাকাকালীন প্রথমে আবু জাফারের সাথে আমেরিকান মুসলিম নারী ফাতেমা মোহাম্মদ মুসার প্রেমের সম্পর্কে গড়ে উঠে। দীর্ঘ প্রণয়ে তারা দু’জন ২০১০ সালে বিয়ে করেন। বর্তমানে আবু জাফর আমেরিকায় বসবাস করছেন এবং তাদের দাম্পত্যজীবন ভালোই চলছে।
আবু জাফর আরো জানান, গত ৩ বছর আগে তার স্ত্রী ফাতেমা মুসার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী জোনস জিউনাবচনের সাথে সম্পর্ক হয় বড় ভাই শাহাদাত হোসেনের। জোনস জিউনাবচন অন্য ধর্মের নারী। ভালোবাসার জন্যে সে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন।
সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই চাঁদপুরের ছুটে আসেন জোনস জিউনাবচন। ৪জুন বেশ ঘটা করে তাদের বিয়ে হয়। এই দম্পতীও আমেরিকায় স্থায়ী হবার কথা রয়েছে।
নবদম্পতি শাহাদাত হোসেন ও নববধূ জোনস্ জিইনাবচন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইন্টারনেটের কল্যানে আমাদের পরিচয় এবং প্রণয়। আমাদের ভালোবাসা ছিলো ৩ বছর ধরে। তারা দু’জন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় করোনাকাল। শাহাদাত হোসেন করোনায় চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
এদিকে বাংলাদেশে করোনা পরিস্তিতি ভয়াবহ হওয়ায় জোনস্ জিইনাবচন তাঁকে আমেরিকায় নিতে পারছিলেন না। তবুও তারা হার মানতে রাজি নন, অবশেষে অমেরিকায়া করোনা পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হলে জোনস্ জিইনাবচন নিজেই ছুটে আসেন বাংলাদেশে। শুক্রবার তারা বিয়ে করেন। দাম্পত্যজীবনের আগামী দিনগুলো ভালোবাসাময় কাটাতে তারা সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আলোচিত এই বিয়ে সম্পর্কে আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন মাস্টার বলেন, বিয়েতে আমি যোগ দেইনি। তবে ঘটনাটির সম্পর্কে অবগত রয়েছি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বলেন, একজন বিদেশি নারীর সঙ্গে এমন বিয়ের আয়োজন। তবে বিষয়টি পুলিশ কিংবা প্রশাসন অবগত নয়। তারপরও এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,৬ জুন ২০২১