‘শাশ্বত সত্য ও সুন্দরের পথে’ এই স্লোগানকে ধারণ করে পথচলা শিল্প-সাহিত্যের সংগঠন ‘সাহিত্য মঞ্চ’র নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২৪ মে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক সভায় তিনটি পদে সংগঠনের সকল সদস্যের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে আগামী দুই বছরের জন্যে সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম মানিকে পুনরায় সভাপতি এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক বিন রহিমকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক এবং নিঝুম খানকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
নির্বাচন পরিচালনা করেন সংগঠনের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুল্লা কাহাফ এবং সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক শুভ্র রক্ষিত। এই তিন পদে নির্বাচিতরা আগামী ১ মাসের মধ্যে সাহিত্য মঞ্চের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সাহিত্য মঞ্চের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আহসান, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন মিয়াজী, আবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক নুরুন্নাহার নিশি, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মারিয়া ফারজানা, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এএম সাদ্দাম হোসেন, নির্বাহী সদস্য শরীফ উল্লাহ, নার্গিস তন্বী, বিথী নন্দী, শ্রাবনী সেন, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন, সমাজ কল্যান সম্পাদক সাদ আল আমিন, আপ্যায়ন সম্পাদক সূচনা সাহা, সম্মানিত সদস্য লাবনী আক্তার, মোবাশ্বারা তাহমিম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত : ২০১৮ সালে ৩০ নভেম্বর পথ চলা শুরু করে সাহিত্য মঞ্চ। প্রতিষ্ঠার পর সাহিত্য মঞ্চের প্রথম আয়োজন ছিলো ‘প্রমিত উচ্চারণ, উপস্থাপন ও আবৃত্তি বিষয়ক কর্মশালা’। এতে প্রায় আড়াইশ’ প্রশিক্ষণার্থী ৫০টাকা রেজিস্টেশন ফি দিয়ে দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করে। এছাড়াও লেখক-পাঠক মৈত্রী প্রহর, কবিতা প্রহর, চড়ুইভাতি ও নৌ-ভ্রমণ, জ্যোৎস্না উৎসব, মৌসুমি ফলচক্র, বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা, বিজয়ের কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এই সবগুলো অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান কবি ও লেখক ও স্থানীয় সাহিত্যপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অতিথি হয়ে আসেন। সাহিত্য মঞ্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠনে অতিথি হয়ে চাঁদপুরে এসেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কবি ও অনুবাদক ড. মাসুদুজ্জামান, বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী কাজী মাহাতাব সুমন, দেশবরেণ্য কবি ফরিদ কবির। এসেছেন চাঁদপুরের মানব্যর জেলা প্রশাসক, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা, পৌরসভার মেয়রসহ অসংখ্য গুণী ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়াও উচ্চারণ-উপস্থাপন ও আবৃত্তি বিষয়ক দীর্ঘমেয়াদী কর্মশালার আয়োজন করে এবং নিজস্ব একটি শক্তিশালী আবৃত্তি দল গঠন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, একুশে বই মেলা, উদ্যমী নারী মেলা, চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের মতো বড় আয়োজনগুলোতে অংশগ্রহণ করে আবৃত্তি পরিবেশন এবং স্বীকৃতিস্বরুপ দলগত সনদপত্র, ক্রেস্ট ও সম্মানী অর্জন করে। সর্বশেষ এ দলটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয় ও জাতীয় আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুকে কবিতা আবৃত্তির স্থানীয় সংগঠনের দায়িত্ব পালন করে।
সবকিছু ছাপিয়ে সাহিত্য মঞ্চের এই পথচলায় সবচেয়ে বড় অর্জনের পালকটি হলো ‘চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলন ২০২০’। মহামারী করোনাকালীন সময়কে সামনে রেখে শতভাগ স্বাস্থবিধি মেনে এই সাহিত্য সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা চাঁদপুরে জন্ম নেয়া সকল শব্দশিল্পীর একটি মিলনমেলায় পরিনত করা। যার উদ্বোধন করেন চাঁদপুরের কৃতিজন জাতীয় অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন, চাঁদপুরের গর্ব শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। দিনব্যাপী এই আয়োজনে আরো ছিলেন বাংলা বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনসহ খ্যাতিমান বহু কবি, গল্পকার, ছাড়াকার, নাট্যকার, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিকগণ।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলনে ছয়টি শাখায় ছয়জন বরেণ্য লেখক ও সংগঠককে দেয়া হয় ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২০।’ সবশেষ চা শ্রমিক হত্যা দিবসে শতবর্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে। যা সমগ্র দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
যার ফলশ্রুতিতে সাহিত্য মঞ্চ দেশের শব্দশিল্পীদের কাছে অাদুরে একটি নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
সাহিত্য মঞ্চ স্বপ্ন দেখে, নিজেকে নিজের ছাড়িয়ে যাবার। প্রগতিশীল চিন্তায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং সত্য ও সুন্দরের চর্চায় আরো দূর এগিয়ে যাবে সাহিত্য মঞ্চ। এভাবেই একদিন পৃথিবীর সকল শব্দশিল্পী তথা ভালো মানুষের ভালোবাসা কুড়াবে সাহিত্য মঞ্চ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
স্টাফ করেসপন্ডেট