মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রাম। বাইরে থেকে যে কেউ এ গ্রামে ঢুকলে অবাক হবেন। কারণ এ গ্রামের বাতাসে ভেসে বেড়ায় লেবুর ঘ্রাণ। এ গ্রামে প্রায় ৩০০ পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লেবু গাছ। বাড়ির উঠান, আঙিনা যেখানেই ফাঁকা জায়গা, সেখানেই লেবু গাছ লাগানো হয়েছে। আছে দেড় শতাধিক ছোট-বড় লেবুর বাগান। আর এ জন্য ‘বালিয়াখোড়া’ এখন লেবুর গ্রাম নামে পরিচিত।
চলছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানে লেবুর সরবতের প্রচুর চাহিদা থাকে। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে গরম পানির সঙ্গে লেবু খেলে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়। আর প্রচণ্ড গরমে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। প্রতি হালি লেবু খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি দরও বেশ ভালো। পাইকাররা বাগান থেকেই লেবু সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তাই কৃষকদের বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। ফলে লেবু চাষিরা করোনা কালীন এই দুঃসময়ে অর্থনৈতিকভাবে বেশ ফুরফুরে।
উপজেলার বালিয়াখোড়া ও পার্শ্ববর্তী সোদঘাটা গ্রামের প্রায় দুই সহস্রাধিক লোক লেবু চাষের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার চাষিরা কলম্বো, এলাচি ও কাগজি জাতের লেবু চাষ করেন। এলাচি জাতের লেবু স্বাদে ভালো হলেও ফলন কম হওয়ায় চাষিরা কলম্বো জাতের লেবু বেশি চাষ করেন। এখানকার চাষিদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের লেবু ঢাকার পাইকারদের মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব বাজারে।
সুগন্ধি, সুস্বাদু ও প্রচুর রসযুক্ত হওয়ায় এই গ্রামের লেবুর কদর সবচেয়ে বেশি। এখানকার লেবু বিক্রি হয় রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার ও গাজীপুরের টঙ্গী বাজারে। এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক লেবু চাষের আয় দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান জানান, বালিয়াখোড়া গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ লেবু চাষের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সারা বছরই তারা বাগানে মাটি তোলা, চারা তৈরি, সার দেওয়া, লেবু তুলে বাজারে বিক্রি করাসহ বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। কৃষি বিভাগ থেকে লেবু চাষিদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয় না। কৃষি বিভাগ একটু নজর দিলে লেবু চাষিরা আরও ভাল করবে।
বিডিএমএর অতিরিক্ত মহাসচিব ডা. মো. আবুল হাসান জানান, লেবুর রস জীবাণুনাশক, সংক্রমণ দমনকারী, হজমে সাহায্য করে, চর্বিকে দূরে রাখে। লেবু শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। লেবুতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি। লেবু পেট পরিষ্কার করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ঘিওরের বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামের মানুষ লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ অঞ্চলের লেবুর কদর রয়েছে সারা দেশে। এখন বিদেশিদেরও খাবার তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে ঘিওরের লেবু। কৃষি বিভাগ থেকে ওই এলাকার লেবু চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
বার্তা কক্ষ,১৭ এপ্রিল ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur