কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এম্বুলেন্স চক্রে প্রতারণার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন এবং থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ওই রোগীকে বৃহস্পতিবার ভোরে সিট থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন হাসপাতালে লোকজন কম থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, ভর্তি সময় ওই রোগী জীবিত ছিলেন। এখন তারা কী জীবিত রোগী নিয়েছেন, না মৃত; সেটা এখনও বলতে পারছি না।
হাসপাতালের পরিচালক আরও জানান, এ ঘটনা তদন্তের জন্য হাসপাতালের ডা. সোহেল, ডা. আবু বকর ও ডা. কাইজারকে নিয়ে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত করে আমাকে প্রতিবেদন দেবেন। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের কেউ ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভোরে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত রোগী মাহাবুল এম্বুলেন্স চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে চিকিৎসাবিহীন মারা যাওয়ার ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকেই কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।
১৩ মার্চ শনিবার হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়- কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের রোগী বাবুল (২০)-কে চিকিৎসকের বিনাঅনুমতিতে ও অগোচরে বেসরকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো-চ-৭১৩০৭২) কর্তৃক হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়টি তদন্তপূর্বক উক্ত অ্যাম্বুলেন্সের চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ করা হয় সাধারণ ডায়েরীতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, কুমিল্লার পুলিশ সুপারসহ অত্র হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ইনচার্জ, ওয়ার্ড মাস্টার ইনচার্জ এবং হাসপাতালের সহকারী পরিচালককে এর অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
শুধু সাধারণ ডায়েরীই নয়, পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত দরখাস্তও করেছেন হাসপাতালের পরিচালক। দরখাস্তে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করণ এবং হাসপাতাল এলাকা থেকে বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স সমূহ জরুরী ভিত্তিতে সরিয়ে দেয়ার আবেদন করেন।
আরও পড়ুন… কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ নিয়ে এম্বুলেন্স চালকের বাণিজ্য
এছাড়াও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এম্বুলেন্স চক্রে প্রতারণার ঘটনার চাঁদপুর টাইমসের সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি এবং অফিস আদেশ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন থেকে সকল প্রকার ঔষধ পত্র, যন্ত্রপাতি, খাদ্য সামগ্রী, অন্যান্য মালামাল, পথ্য সামগ্রী যথাযথ কক্ষে রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা পত্র, রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য কাগজ পত্র যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিকিৎসকগণকে।
৫০০ শয্যার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী জেলার হাজারো রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন। কুমেক হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভয়ংকর প্রতারক চক্র।
তারা এতটাই সংঘবদ্ধ যে, মুহুর্তের মধ্যেই ভর্তি রোগীদের হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারে। ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়ে যাওয়ার সময় তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রও নেয় না, কখনো রোগীর মূল কাগজপত্রাদিও তাদের হাতে নিয়ে যায়। এমনকি রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা! এই চক্রের সদস্যদের মূল টার্গেট হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের পরিচালককে ঘিরে থাকা কর্মচারী, চিকিৎসক ও নার্সদের অনেক সদস্য এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগিতায় চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রতিনিয়তই ভোগান্তি এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগি ও স্বজনরা। গেলো বৃহষ্পতিবার ভোরে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মাহাবুল নামে এক ব্যক্তি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নেয়ার নামে রেফার ছাড়াই হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে প্রাইভেট এম্বুলেন্সে তুলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এসময় এম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হলেও তাকে আহত রোগী সাজিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের চেষ্টা করে চক্রটি। এমনই একটি চঞ্চল্যকর ঘটনা বেরিয়ে আসে সময়ের আলোর অনুসন্ধানে।
উল্লেখ্য যে, বৃহস্পতিবার ভোরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বারে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে তিশা পরিবহনের একটি বাসে ১৫ যাত্রী আহত হয়। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১২জনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। ভর্তি হওয়া গুরুতর আহত বাস যাত্রীদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে মাহবুবুল আলমকে (বাবুল)। চট্টগ্রাম থেকে বাড়ী ফেরার পথে বৃহষ্পতিবার ভোরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে বাস দূর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত বাস যাত্রী মাহাবুলকে ভর্তি করা হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরী বিভাগের রেজিস্ট্রারে ভ‚ল করে মাহাবুলের পরিবর্তে তার নাম লিখা হয় বাবুল।
প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল,১৪ মার্চ ২০২১