কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ নিয়ে এম্বুলেন্স চালক ও মালিকের বাণিজ্যেও অভিযোগ পাওয়া গেছে! সড়ক দূর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নেয়ার অজুহাতে স্বজনদের কাছে মোটা টাকা দাবি করেছেন একটি প্রাইভেট এম্বুলেন্স চালক ও মালিক।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাস যাত্রী হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে চিকিৎসাধীন থাকলেও রোগির খোঁজ মিললো প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে। তবে জীবিত নয়, হাসপাতালে এসে স্বজনরা এই রোগীকে পেয়েছেন মৃত।
১১ মার্চ বৃহস্পতিবার এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবহেলায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এই বাস যাত্রীর।
বৃহস্পতিবার ভোরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বারে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে তিশা পরিবহনের একটি বাসে ১৫ যাত্রী আহত হয়। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১২জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। ভর্তি হওয়া গুরুতর আহত বাস যাত্রীদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে মাহবুবুল আলমকে (বাবুল)।
সকালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে বলে মোবাইল ফোনে রোগির স্বজনদের জানায় মেডিকেল কলেজের সামনে থাকা প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স চালক রোহান। এজন্য এ্যাম্বুলেন্স চালক তাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। দ্রুত এ টাকা পাঠাতে বলেন চালক। কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর ওই এ্যাম্বুলেন্স চালক আবার কল করে ১৫ হাজারে নেমে আসেন। সবশেষে চালক ১১ হাজার টাকা দাবি করেন।
এদিকে এই খবর পেয়ে মাহবুবুল আলমকে (বাবুল) এর স্বজনরা কুমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখেন তাদের রোগি (আহত বাবুল) নেই।
এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে রোগির স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সামনে মালিক ও চালকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন এবং এ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালককে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
এসময় পরে রোগির স্বজনরা অভিযুক্ত এ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালককে আটক করলেও পরে তারা কৌশলে পালিয়ে যায় এবং অভিযুক্তরা নিহত বাস যাত্রীর লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই কৌশলে অন্য একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহতের স্বজনরা পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করলে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে আটকের জন্য তৎপর হয় পুলিশ।
ঢাকা মেট্রো-৭১৩০৭২ নম্বরের এ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ইউছুফের বাড়ি কুমিল্লা শহরে এবং চালক রোহান কোতয়ালী থানাধীন মুরাদপুর এলাকার মোঃ রফিক এর ছেলে।
রোগির স্বজন সাইফুল ইসলামের অভিযোগ সড়ক দূর্ঘটনায় আহত রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা; কিন্তু কোন ছাড়পত্র কিংবা রেফার করা ছাড়া রোগিটি এ্যাম্বুলেন্সে যায় কিভাবে? এ ঘটনার জন্যে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ি করেন।
তবে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, ভোর বেলায় হাসপাতালে লোকজন কম থাকার সুযোগে জরুরী বিভাগের কাছ থেকে চক্রটি আহত রোগিটিকে জোর করে নিয়ে যায়।
এবিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, যারা এই কাজটি করেছে গুরুত্বর অন্যায় করেছে। তবে, ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করতে দেওয়া হবে না এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানালেও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র ছাড়া রোগিটি এ্যাম্বুলেন্সে গেল কিভাবে এমন প্রশ্নের কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যপারে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম-উল-আহসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আইনগত ভাবে এবং সামাজিক ভাবেও বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এই সিন্ডিকেটে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান।
অন্যান্য রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা অতিরিক্ত অর্থের লোভে বিভিন্ন চক্রের সাথে যোগসাজসে এই ধরণের অনিয়মগুলো প্রায় করে থাকেন। তাদের এই অনিয়মের ফলে রোগি ও তার স্বজনরা ভোগান্তি এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল,১১ মার্চ ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur