আর কয়েক ঘণ্টা পরই অমর একুশ তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের প্রথম প্রহরে মহান শহিদদের শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে শহিদ মিনার।
এই দিবসটি সুষ্ঠুভাবে পালনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরইমধ্যে শহিদ মিনার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। রং করা হয়েছে মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা। রাস্তার পাশের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা গান, কবিতা ও স্লোগান।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি উদযাপনের জন্য বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় লোকসংখ্যা নির্দিষ্ট ও মাস্ক পরাসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।
শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পরিদর্শনে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিমূল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ সময় উপাচার্য বিগত বছরগুলোর মতো এবারও মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পালনে সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
রাতে শহিদ মিনার এলাকায় দেখা যায়, অমর একুশে উদযাপনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।প্রায় দেড়শ স্বেচ্ছাসেবী আল্পনা আঁকার কাজ করেছেন। এর আগে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে বেদি ও এর আশপাশের স্থানসমূহ। নিরাপত্তা নিশ্চত করতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতহার হোসেন ভবনের সামনে র্যাব, পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে সিসিটিভির মাধ্যমে সমগ্র এলাকাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে এ বছর সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫ জন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২ জন একসঙ্গে শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সবাইকে অবশ্যই যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পলাশী মোড় থেকে শহিদ মিনার পর্যন্ত রাস্তায় ৩ ফুট পর পর চিহ্ন থাকবে। এই চিহ্ন অনুসরণ করে সবাই পর্যায়ক্রমে শহিদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিভিন্ন প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে প্রচার চালাবেন।
সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে অমর একুশে উদ্যাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, আমাদের কাজ শেষ। শহিদ বেদিতে প্রাথমিক রং করার কাজ শেষ হয়েছে।
করোনার কারণে প্রস্তুতিতে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো সমস্যায় পড়ছি না। সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার প্রটোকল অফিসার ফুল দেবেন বলে চিঠি পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আর স্পিকারের পক্ষ থেকে তার প্রোটকল অফিসার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। করোনার কারণে এবার জনসমাগম বেশি হবে না বলে মনে হয়। তারপরও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক (বিএনসিসি, রোভার স্কাউট) থাকবেন। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে ল-ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সি থাকবে। তারাও বিগত বছরগুলোর মতোই প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur