বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশে এখন প্রায় এগারো কোটি মানুষের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার আইডি কার্ড কিংবা স্মার্ট কার্ড যে নামেই বলুন না কেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পদে পদে দরকার হবে এটি। চাকরি-বাকরি, ব্যাংকে হিসাব খোলা, মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন সব জায়গাতেই এই কার্ডের প্রয়োগ আছে। আর সরকারি সব কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় পরিচয়পত্র। আপনি চাইলেই ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
যারা ভোটার হয়েছেন, কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাননি, তারা এখন থেকেই অনলাইনে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এনআইডির কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া মোবাইলে এসএমএস করে এনআইডি নম্বর নিতে পারবেন।
করোনা মহামারিতে আক্রান্ত সারাদেশ তথা বিশ্ব। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে NID সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অনলাইন NID সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। অনলাইনের এই সেবা পেতে ভোটারকে https://services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
এসএমএস:
ভোটার হয়েছেন, কিন্তু এনআইডি পাননি, তাদের এনআইডি নম্বর পেতে প্রথমে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে NID লিখে স্পেস দিয়ে ভোটার হওয়ার ফরম নম্বর লিখে স্পেস দিতে হবে। এরপর জন্ম তারিখ (দিন-মাস-বছর) লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে এনআইডি নম্বর চলে আসবে।
অনলাইনে এনআইডি কপি:
০২ মার্চ ২০২০ তারিখে সর্বশেষ হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় প্রকাশিত ৬৯,৫৮,৩৪১ জন নতুন নিবন্ধিত ভোটার অথবা তার আগে যারা ভোটার হয়েছেন, কিন্তু এনআইডি কার্ড পাননি, তারা তাদের নিবন্ধন ফরম নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করবেন। পরে বায়োমেট্রিক যাচাই শেষে এনআইডি কপি বা নম্বর পাবেন তারা। তবে দ্বৈত ভোটার হলে এনআইডি কপি বা নম্বর পাওয়া যাবে না।
যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু NID কার্ড পাননি, তারা https://services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটে ‘অন্যান্য তথ্যের’ ট্যাবে গিয়ে NID নম্বর লিংকে Form নম্বর ও DOB (Date of Birth) দিলে আবেদনকারীর NID নম্বর পাবেন।
যারা NID নম্বর পেয়েছেন, তারা online portal এ NID এর তথ্য ও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে online portal এ login করতে পারবেন । login এর পর আবেদনকারী ফরমের এন্ট্রি করা সব ডাটা দেখতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তি যদি আগে কার্ড না পেয়ে থাকেন, তাহলে চাইলে তিনি পোর্টাল থেকে NID copy সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনলাইনে এনএআইডি সংশোধন:
কোনো ব্যক্তি যদি জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেন অথবা সংশোধন করতে চান, তবে তিনি প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংযুক্ত করে online এ আবেদন করতে পারবেন। online এ আবেদনকারী NID কার্ডের আবেদনের বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন। আবেদন অনুমোদিত হলে আবেদনকারী sms পাবেন এবং portal থেকে পুনরায় NID copy সংগ্রহ করতে পারবেন।
ভোটার হতে আবেদন:
যারা এখনও ভোটার হননি, তারা অনলাইনে https://services.nidw.gov.bd এই ঠিকানায় নতুন ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করে রাখতে পারবেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট থানা, উপজেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে এসে বায়োমেট্রিক দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন। পরবর্তীতে তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
ইতোমধ্যেই নিশ্চয়ই জেনে গেছেন এখন অনলাইনেই তথ্য সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। শুরুতেই এনআইডি পোর্টালে ঢুকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।যাদের পূর্বে থেকেই এনআইডি কার্ডএর জন্য রেজিস্ট্রেশান করা হয়েছে, তারা কি করবে? তারা তো কোনো ভাবেই OR Code পাচ্ছে না। তাদের ক্ষেত্রে NID Wallet ব্যবহারের জন্য কোনো অপশনস রাখা উচিত ছিলো। যারা আগে থেকেই রেজিষ্ট্রেশন করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে NID Wallet এর ব্যবহার দরকার নেই। এটি শুধুমাত্র নতুন রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি ওয়েবসাইট এ আপনার অ্যাপটি ইন্সটল না দেখায়, তাহলে ঐ পেজ এর “COPY” আইকনে ট্যাপ করে কোডটি কপি করুন, এরপর অ্যাপ্লিকেশানটি ওপেন করে উপরের “Enter Code” আইকনে ট্যাপ করুন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে আপনার NID ব্যবহার করে অন্য কেউ যাতে আপনার অ্যাকাউন্ট দাবি করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে।
সেখানে এনআইডি নম্বরটি দরকার হবে। অ্যাকাউন্টে ঢুকলে সেখানে লিংক পাবেন অনলাইনে অর্থ পরিশোধের।
ওকে ওয়ালেট ও রকেটের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা যায়। সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমেও পরিশোধ করতে পারেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রে যেসব তথ্য লেখা থাকে সেগুলোর যেকোনো একটি সংশোধন করতে চাইলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তী যতবার আবেদন করবেন ৪০০ টাকা ফি দিতে হবে।
এছাড়া আরও কিছু তথ্য রয়েছে যেগুলো পরিচয়পত্রে লেখা থাকে না। সেগুলোও সংশোধন করা যায়।
সেক্ষেত্রে প্রথমবার ১০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তীতে প্রতিবার ৩০০ টাকা ফি দিতে হবে।
যেমন নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদপত্র, পাসপোর্টের কপি, ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বিদ্যুৎ বা পানির বিলের কাগজ, বিয়ের পর স্বামীর নাম যোগ করতে চাইলে নিকাহনামা, স্বামীর জাতিয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে, বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাকনামা সংযুক্ত করতে হবে।
কোন ধরনের সংশোধনে কি কাগজ লাগবে সেটি ওয়েবসাইটেই দেয়া রয়েছে। তথ্য সংশোধন অনুমোদন হয়ে গেলে আপনি একটি মেসেজ পাবেন।
ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেই সংশোধিত এনআইডি প্রিন্ট করে লেমিনেট করে নিতে পারেন।এখন অনলাইনেই তথ্য সংশোধন করা যায়।
ইন্টারনেট না থাকলে যা করতে হবে
বাংলাদেশে সবার ইন্টারনেট ব্যাবহারের সামর্থ্য নেই। অথবা অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাদের জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্বাচন অফিস রয়েছে।
সেখানে দুইজন করে ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
“তারাই সবধরনের ডাটা এন্ট্রিতে সহযোগিতা করবেন। তাদের সেভাবে বলা আছে। এটা পুরোটাই বিনামূল্যে করবেন তারা। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়ন কাউন্সিলে যে ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে সেখানেও যাতে নাগরিকেরা অনলাইনে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা পান সেই পরিকল্পনা করছি আমরা।”
কিন্তু ভুল কমানোর জন্য কি করা হচ্ছে?
এই প্রশ্নের জবাবে মি. ইসলাম বলেন, যখন প্রথম এনআইডি বিতরণ শুরু হয়েছিল, একদম নতুন একটা কাজ, সেসময় বেশ কিছু ভুল হয়েছিল।
কিন্তু এখন ভুলের সংখ্যা অনেক কম বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলছেন, কয়েক ধাপে তথ্য যাচাই হয়।
“জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদনকারী নিজে ফর্ম পূরণ করেন, সেই তথ্য সার্ভারে তোলেন একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, এরপর একজন প্রুফ রিডার সেটা যাচাই করেন এবং তারপর সেসব তথ্য সার্ভারে আপলোড করা হয়। আবেদনকারীকে যখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি দিতে আসবেন সেসময় তাকে একটি প্রিন্ট আউট দেয়া হয় তথ্য যাচাই করার জন্য। সেই কপিতেও সই করেন তিনি। এই কারণে ভুলের সংখ্যা খুবই কম।”
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে সকল তথ্য ও কাগজ সংযুক্ত করে নতুন এনআইডি কার্ড নিজেই এখন ঘরে বসে করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।
বার্তাকক্ষ,২৪ অক্টোবর,২০২০;