দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও যেকোন স্বাভাবিক কাজ করে চলেছেন কোরআনে হাফেজ ইব্রাহিম খলিল। স্বাভাবিক মানুষের মতো চলেফেরা, ইমামতি ও মোবাইল রিচার্জসহ নানা কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ হাফেজ । স্মৃতি আর ঘ্রান শক্তি দিয়ে মুখস্থ করেছেন ৩০ পারা কোরআন। পাশাপাশি ঘ্রান শক্তিকে কাজে লাগিয়ে করছেন ইমামতি ও মোবাইল রিচার্জ ব্যাবসা। টাকা গোনা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীক লেনদেন সব চলে তার অন্য দু’চারজন ব্যবসায়ীর মতো। ভিক্ষার বিপরীতে এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এমনি দেখা গেছে চাঁদপুর শহরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইব্রাহীম খলিলুর রহমানকে। যানজটের নগরী চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে কারো সহযোগিতা ছাড়াই হাঁটা-চলা করছেন। পাশাপাশি জীবন জীবিকার টানে দৃষ্টিহীন ভাবেই বিভিন্ন জনকে মোবাইলে রিচার্জ করে থাকেন। অবাক করার বিষয় হলো এই অন্ধ হাফেজ চোখে দেখতে না পেলেও অন্ধকারেই নিজের মনন শক্তিতে বিভিন্ন পরিচিত জনের মোবাইল কল রিসিভ এবং কল দিয়ে থাকেন।
পরিচিত কারো কণ্ঠ একটু শুনেই ওই পরিচিত ব্যক্তির নাম বলে দিতে পারেন। এছাড়া সে যখন যেখানে যান তখন কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তায় চলাফেরা করে থাকেন। আর এভাবেই সে দীর্ঘ বছর ধরে চাঁদপুরে জীবন যাপন করে চলেছেন
চাঁদপুরে যাকে অধিকাংশ লোকই অন্ধ হাফেজ খলিলুর নামে চেনে। খবর নিয়ে জানা গেছে ইব্রাহীম খলিল বর্তমানে চাঁদপুর শহরের ভূমি অফিস জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি সে চাঁদপুর ডিসি অফিস, জজকোট, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস, চাঁদপুর সদর উপজেলা এবং শিক্ষক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত বিভিন্ন জনের মোবাইল রিচার্জ করে থাকেন। শুক্রবার এবং শনিবার সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন তার গড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা রিচার্জ হয়ে থাকে। এতে তার দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকা আয় হয়।
ইব্রাহিম খলিলুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে সে এ ফ্লেক্সিলোড করে থাকে। ফ্লাক্সিলোড করতে গিয়ে কখনো কখনো নাম্বার ভুল হয়ে যায়। কিন্তু সে টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়নি।
হাফেজ মোঃ ইব্রাহিম খলিলুর রহমান হাজার ১৯৮৬ সালে চাঁদপুর শহরের দক্ষিণ বিষ্ণুদী এলাকার জিটি রোডে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ আলী আহমদ মিয়াজী। সে জানায় জন্মের পাঁচ বছর পর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে। তারপর সে স্কুল জীবন শুরু করে, ২০০০ সালে চাঁদপুর প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে এস এস সি পাস এবং ২০০৫ সালে কোরআনে হাফেজ সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সালে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন.। বর্তমানে তার সংসার জীবনে দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে।
খলিলুর রহমান মসজিদে ইমামতি এবং বিভিন্ন জনের মোবাইল রিচার্জ ছাড়ি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলেও বক্তব্য দিয়ে থাকেন বলে জানান।
আরও পড়ুন : ফরিদগঞ্জে হাফেজ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে টয়লেট করে দিলেন সাবেক মেয়র
এই দৃষ্টিহীন জীবনে কিভাবে সে এত কাজ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সে একাই বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করে থাকেন এবং ঢাকা থেকে বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে মানুষকে রিচার্জ সেবা দিয়ে থাকেন ও বিভিন্ন জনের কল রিসিভ এবং কল ব্যাক করে থাকেন। এতে তার চলাফেরা তেমন কোন সমস্যা না হলেও রাস্তা পারাপারের সময় মানুষের সহযোগিতা নিতে হয়।
তবে একা চলার ক্ষেত্রে কারো সহযোগিতা পেলে একটু ভালো হয় বলে জানান। যখন সে দূরে কোথায়ও যান তখন সাদাছড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এভাবেই ভিক্ষার বিপরীতে দৃষ্টিহীন হয়েও কর্মের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে অন্ধ হাফেজ ইব্রাহিম খলিলের জীবন তরী।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ২৩ নভেম্বর ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur