চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর বাজারের দু’কি.মি.দক্ষিণে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বগার গুদাড়ায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ ব্রিজের প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজ শেষ হয় ২০১৯-’২০ অর্থবছর।
দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলতি ২০২০-’২১ অর্থবছরের জানুয়ারিতে শুরু করা হবে বলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র প্রকৌশলী এসএম রাফিউল ইসলাম এ তথ্যে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে ব্রিজের বাকি দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২০২০-‘২১ অর্থবছর ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ব্রিজের পূর্বপাশে ২২৩ মিটার এবং পশ্চিম পাশে ১৪০ মিটার অ্যাপ্রচ রোড স্লোভ আকারে নির্মাণ কাজের টেন্ডার ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনূস হোসেন বিশ্বাস বলেন,‘ এক পাড়ে চাদঁপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের অংশ এবং অপর পাড়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের অংশ। দ্বিতীয় ধাপের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।এখন কার্যাদেশ চলমান পর্যায়ে রয়েছে।
ডাকাতিয়া নদীর পানির স্তর আগামি জানুয়ারির মধ্যে নিচে নেমে আসামাত্রই ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শুরু করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭-’১৮ অর্থবছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের সুযোগ্য কন্যা শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপি চাঁদপুরের অংশ ও ফরিদগঞ্জ আসনের সাবেক সাংসদ ড.শামছুল হক ভূঁইয়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
২০১৬-’১৭ অর্থবছরে এর কাজ শুরু হলেও বর্ষায় ও অসময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে ডাকাতয়িার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫-৬ মাস যাবত ব্রিজটির কাজ বন্ধ ছিল। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২শ’৭৪ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার।
চাঁদপুর-হাইমচর আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি’র পিতা ভাষাসৈনিক মরহুম এমএ ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণের প্রস্তাব রয়েছে।
চাঁদপুরের‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ’(এলজিইডি) এর কাজ বাস্তবায়ন করছে। দু’জন সহকারী প্রকৌশলী দু দিকের কাজ তদারকি করছেন। ৪টি বড় ও ১০টি ছোট আরসিসি পিলারের ওপর ব্রিজটি নির্মাণ হচ্ছে।
এর উভয় এ্যাপ্রোস রোডের দৈর্ঘ্য ৩৬৩ মিটার। ইতোমধেই যে সকল বড় বড় ব্রিজ নির্মিত হয়েছে এটি হবে চাঁদপুরের অন্যতম বড় বৃহৎ ব্রিজ।
ব্রিজটি চালু হলে চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের সাথে অবহেলিত বালিথুবা ইউনিয়নের ইসলামপুরের অংশের সাথে চমৎকার সংযোগ সৃষ্টি হবে। অনাদিকাল থেকেই এপারের লোকজন ওপার ও এপারের লোকজন এপারে সামাজিক আচার,অনুষ্ঠানের,হাট-বাজার,ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি পণ্য বাজার করতে এপার-ওপারে চলাচল করত।
এক সময় শত শত কলেজ শিক্ষার্থী দূর-দুরান্ত থেকে পাঁয়ে হেঁটে এ স্থান দিয়ে পার হয়ে চাঁদপুর সরকারি ও মাহলা কলেজে আসা-যাওয়া করতো এবং বিভিন্ন চাকুরিজীবীরা এসে ট্রেনে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়ত করত। ফলে কালক্রমে এর নাম বগারগুদারা হয়ে যায়।
যতদূর জানা গেছে-স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ বগার গুদাড়া দিয়ে সন্ধ্যা হলে ওপারে গিয়ে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম একটি চলাচলের নিরাপদ পথ ছিল বগার গুদাড়া।
সুন্দরদিয়ার বাজারের দু’কি.মি দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদীর পূর্ব তীরে এ বগারগুদাড়া অবস্থিত। ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ও তত্ত্বাবধানে আছে চাঁদপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৗশলী বিভাগ। ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার নবারণ টেড্রার্স লি.এর বাস্তবায়ন করছে।
পুরো কাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে চাঁদপুর-ফবিদগ্ঞ্জ এ দু’উপজেলাবাসীর স্বপ্নের ব্রিজ।
আবদুল গনি,২৮ অক্টোবর ২০২০