চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম মেহেদী লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদেশ গমনেচ্ছুদের পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরির কাজে সহায়তা করতেন। বাল্যবন্ধু আহসান, তাঁর আত্মীয় আলাউদ্দিন পাসপোর্ট সংশোধনের কাজে মেহেদীকে সহায়তার কথা বলেন।
ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টের শেফ আহসান, গাড়িচালক আলাউদ্দিন করোনাকালে বিকল্প আয়ের জন্য পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মীর সহায়তায় কাজ করছেন বলে জানান। দুজনকে কাজের জন্য দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন মেহেদী। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্টের কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চান তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মেহেদীকে ঢাকায় ডেকে এনে হত্যার পরিকল্পনা করেন আহসান ও আলাউদ্দিন।
পরিকল্পনা আনুয়ায়ী মেহেদীকে খিলক্ষেতের বাসায় নিয়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন আহসান। এরপর সহকর্মী তামিম এবং আরেক গাড়িচালক রহিমের সহায়তায় বস্তায় ভরে লাশ হাতিরঝিলে ফেলে যান। হত্যায় জড়িতরা পাসপোর্ট অফিসের দালাল সিন্ডিকেটে জড়িত।
গত সোমবার হাতিরঝিলে লাশ উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে রহস্য উদঘাটন করেছে। গতকাল বুধবার প্রধান আসামি আহসান ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামি তামিম ও রহিমের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, লাশের পরিচয় শনাক্তের মাধ্যমে রহস্য যেন উদঘাটন না করা যায় সে জন্য লাশ বিকৃত করেন হত্যাকারীরা। লাশের কাছাকাছি স্থানে পাওয়া একটি কাগজে মোবাইল ফোনের সূত্রে রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে লাশের পরিচয় যাতে শনাক্ত করা না যায় সে জন্য হাতের আঙুল বিকৃত করার পাশাপাশি মুখমণ্ডলও বিকৃত করা হয়েছে। আসামিরা যেখানে লাশ ফেলেছিল সেখান থেকে ৫০ মিটার দূরে পাওয়া একটি ছেঁড়া কাগজে লেখা মোবাইল ফোনের নম্বরের সূত্র ধরে লাশের পরিচয় শনাক্ত করার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার আসামি গ্রেপ্তার, সব আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ লাশ বিকৃত থাকায় কোনো ক্লু পাচ্ছিল না। শেষে মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্রে জানা যায়, নিহত যুবক চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামের ফখরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ এলাকায়।
তদন্তের সূত্রে পুলিশ গত মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে খিলক্ষেতের উত্তরপাড়া থেকে আসামি আহসান ও তামিম; হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে আলাউদ্দিন এবং রামপুরা থেকে রহিমকে গ্রেপ্তার করে।
আসামিদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ জানতে পারে, আহসানের বাড়িও সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামে। তিনি নিহত মেহেদীর বাল্যবন্ধু। মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে গত মার্চ মাসে গুলশানের দ্য গ্রোভ রেস্টুরেন্টে এক্সিকিউটিভ শেফের চাকরি নেন আহসান।
বার্তা কক্ষ,১৫ অক্টোবর ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur