নারায়ণগঞ্জের তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (লি:) তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
১৭ সেপেটম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াহাব তালুকদার বিদ্যুত ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান বিপুর কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
জানা গেছে, তিতাসের তদন্ত কমিটি মোট ১৬পাতার একটি তদন্ত প্রতিবেদনে গত ৪সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণের পরদিন তথা ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত কার্যদিবসের সরজমিন প্রতিবেদন উল্লেখ করেছেন।
মসজিদ কমিটি দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কযেকদিন আগে থেকেই মসজিদে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন। তারপরও মসজিদ কমিটি এসি অংশের দরজা জানালা বন্ধ করে এসি চালিয়ে নামাজ আদায় করছেন। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য মুসুল্লিদের কোন রকম সতর্ক করা হয়নি। মসজিদ কমিটির অজ্ঞতা-অসচেতনতার জন্য এবং মসজিদে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগের জন্য এহেন দূর্ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর দায়ভার তাদের ওপর বর্তায়।
মসজিদ কমিটি আলোচ্য দূর্ঘটনার পর বিভিন্ন মিডিয়াতে গ্যাস লিকেজ মেরামতের জন্য তিতাস গ্যাসের লোকজন তাদের নিকট ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে মর্মে মসজিদ কমিটির সভাপতি একটি অভিযোগ এনেছিলেন। এবিষয়ে তদন্ত কমিটি, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জমির দাতার নিকট বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চাইলে তারা দুইজনই তাদের লিখিত জবাবে এতদ্বিষয়ে কিছুই জানেন না মর্মে উল্লেখ করেন।
তবে ১৪/১৫ দিন আগে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি সাহেব থেকে তারা শুনেছেন মাত্র বলে জানান। তদন্ত কমিটি আলোচ্য অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ অফিসের গত ৬ মাসের অভিযোগ রেজিস্টার পরীক্ষা করেছে কিন্তু এধরণের কল এন্ট্রি পাওয়া যায়নি। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতি এহেন মিথ্যা বক্তব্যে তিতাস গ্যাসের ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছে।
এছাড়াও মসজিদ কমিটির সভাপতি, মসজিদের জমি দানকারী, মসজিদটির প্রতিষ্ঠায় থাকা ব্যক্তি, স্থানীয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, এলাকার মুসল্লি, আশপাশে গ্যাসলাইন ব্যবহারকারী গ্রাহকদের এবং তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ অফিসের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষর তুলে ধরা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ১৯৮৭সালে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ১ইঞ্চি ব্যাসের একটি ৫০ পিএসআইজি চাপের একটি বিতরণ লাইন নির্মাণ করে তিতাস। ওই লাইন থেকে ১৯৯৬ সালের ১৮এপ্রিল মসজিদের উত্তর পাশে শওকত আলী ও বারেক দেওয়ানকে আবাসকি সংযোগ দেয়া হয়।
গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ১৯৯৮সালে মসজিদের উত্তর পাশে আরেকটি ৩ইঞ্চি ব্যাসের বিতরন লাইন বসায় তিতাস। এরপর উল্লেখিত গ্রাহকরা তিতাসের নীতিমালা ও অনুমোদন ছাড়াই অবৈধপন্থায় ওয়েল্ডার দিয়ে ১ইঞ্চি থেকে ৩ইঞ্চি লাইনে শিফট করেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী শিফটিং করলে তিতাস কর্তৃপক্ষ আগের ১ইঞ্চি লাইন ২টি মূল বিতরন লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতো। ফলে ওই ২টি লাইন তখন থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
পাকা মসজিদ নির্মাণ করার সময় কনক্রিটের ঢালাইয়ের জন্য সাটারিং এবং বেইজ নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত কোদাল,হাতুড়ীসহ নানা যন্ত্রের আঘাতে ওই পরিত্যক্ত সার্ভিস লাইনের রেপিং নষ্ট হয়। ফলে মাটির সংস্পর্শে এসে মরিচাজনিত কারণে পাইপের নানা স্থানে ছিদ্র বা লিকেজ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে লিকেজের মাধ্যমে গ্যাস মসজিদের নিচে আড়াআড়িভাবে ছড়িয়ে পরে এবং সেটি মসজিদের ফ্লোর টাইলসের সংযোগ ও মসজিদের কলাপসিবল গেইটের ফাক দিয়ে নির্গত হতে থাকে।
মসজিদের টাইলসের নিচে বিদ্যমান বালি মাটি যথাযথ Compaction ছিল না এবং মাটির নিচে মসজিদের ওয়াল নির্মাণের গুনগতমান কারিগরিভাবে যথপোযুক্ত ছিল না। মসজিদের নিচের বালির Compaction এবং দেয়াল নির্মাণ সঠিক থাকলে পাইপ লাইন হতে নিঃসরিত গ্যাস মসজিদের নিচে যেতে পারতো না। ফলে মসজিদের টাইলসের ভেতর থেকে বা মেইন গেটের কলাপসিবল গেটের নিচ হতে গ্যাস বের হতে পারতো না। ফলে এহেন দুর্ঘটনার সুযোগ সৃষ্টি হতো না।
বার্তা কক্ষ,১৭ সেপেটম্বর ২০২০