ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, `প্রয়াত নাজিমুদ্দিন মোস্তান ছিলেন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ।
দেশে যখন বাংলা ভাষায় কম্পিউটার বিষয়ক একটি খবর লেখার মানুষ খুঁজে পাওয়া যেতোনা-তখন নাজিমুদ্দিন মোস্তান সাধারণ মানুষের কাছে এ প্রযুক্তিকে সহজ-সরলভাবে তুলে ধরেছেন ।
তিনি বলেন ,‘কম্পিউটার বিপ্লবের ইতিহাসে সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন মোস্তান তাঁর ক্ষুরধার লেখনি কাজে লাগিয়েছেন। কম্পিউটার কি কাজে লাগে,কী কাজ করা যায় এবং বাংলা লেখনির আধুনিক প্রযুক্তিগত মাধ্যম কম্পিউটার থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের সংগ্রাম এবং কম্পিউটার মেলা-আয়োজনের সংগ্রামসহ এ সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন।’
মন্ত্রী শুক্রবার ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রথিতযশা সাংবাদিক প্রয়াত নাজিমুদ্দিন মোস্তানের স্মরণে আয়োজিত এক শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
তিনি তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) সাংবাদিকতায় নাজিমুদ্দিন মোস্তানের অবদান স্মরণ করে বলেন, ‘প্রযুক্তি বিষয়ক রিপোর্ট এবং আইসিটি খাতে তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে রিপোর্ট করার ব্যাপারে দিকে তাঁর (মোস্তান) ঝোঁক ছিল বেশি। নাজিমুদ্দিন মোস্তানের সাংবাদিকতা পেশায় থাকাকালিন লোকজন যেখানে প্রযুক্তি বিমুখ ছিলো, এমনকি সাংবাদিকরাও পারলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন, তখন তিনি (মোস্তান) ছিলেন সম্পূর্ন ভিন্ন এবং পরিপূর্ণ প্রযুক্তিবান্ধব।’
মন্ত্রী বলেন,‘কম্পিউটার প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং সম্ভাবনার খবরা-খবর নাজিমুদ্দিন মোস্তানই প্রথম জাতীয় পত্রিকায় তুলে ধরেন। মূলত অর্থনীতি বিষয়ে সাংবাদিকতা করতেন তিনি। তবে বুঝতে পেরেছিলেন দেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়াবে তথ্যপ্রযুক্তি। সারা পৃথিবীতেই সে-সময় তথ্যপ্রযুক্তির ধারণা নতুন। আর নাজিমুদ্দিন মোস্তান নতুন পথেই হাঁটলেন।’
শুরু করলেন, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি। ১৯৮৭-৮৮ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ এক ক্রোড়পত্রে প্রথম কম্পিউটার নিয়ে লেখেন। তারপর থেকে নিয়মিতই কম্পিউটার বিষয়ে সচেতনতা মৃষ্টি এবং এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে লিখে গেছেন। যেকোন উপলক্ষ্যেই তিনি এবিষয়ে লিখতে ভালোবাসতেন।
মন্ত্রী বলেন,প্রয়াত এ সাংবাদিক আইসিটি বিষয়ে লেখালেখির রসদ সংগ্রহ করার জন্য সবসময় বিভিন্ন কোম্পানিতে যেতেন। বিদেশি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা, বিভিন্ন পণ্যের ব্রশিওর সংগ্রহ করতেন। কম্পিউটার জগৎ পত্রিকার প্রথম প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটিও তিনি যৌথভাবে লিখেছেন। হানিফ উদ্দিন মিয়ার হাত ধরে যেমন এ দেশে কম্পিউটার এসেছে।
কম্পিউটার বিপ্লবে আবদুল কাদেরের অবদান যেমন জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে এবং তাদেরকে যেমন সম্মানিত করা হেেয়্ছ তেমনি নাজিমুদ্দিন মোস্তানকে সম্মানিত করা সময়ের দাবি।
তিনি বলেন,‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মোস্তান ভাইয়ের কাছে ঋণী। কম্পিউটারে বাংলা প্রচলন করতে গিয়ে যতো বাধার মুখোমুখী হয়েছি তার সবটাতেই তিনি বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন।’
অনন্যন্যের মধ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান, গুণিজন সৈয়দ আবদুল হক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক সানজিদা খাতুন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বক্তারা নাজিমুদ্দিন মোস্তানের বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতার-জীবন,বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি সাংবাদিকতায় তাঁর অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। (বাসস )
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
নাজিম উদ্দিন মোস্তানের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার সকদি গ্রামে। তিনি ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাফিজউদ্দিন এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। নিজ গ্রামে পড়াশোনা শুরু করে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম থেকে। পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
চট্টগ্রামের দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রুফ রিডারের চাকরি দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন নাজিম উদ্দিন মোস্তান। তারপর ঢাকায় এসে বাংলাবাজারে একটি প্রকাশনা সংস্থায় প্রুফ রিডারের কাজ শুরু করেন। এরপর দৈনিক পয়গাম পত্রিকায় সহসম্পাদক ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে দৈনিক সংবাদ ও ১৯৭৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সহসম্পাদক পদে কাজ শুরু করেন। নাজিম উদ্দিন মোস্তান দীর্ঘ সময় ধরে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন এবং তিনি এর প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। সব শেষে তিনি রাষ্ট্র নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন।
সহজ ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে লেখালেখির জন্য ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স নাজিম উদ্দিন মোস্তানকে সম্মানিত করে।
প্রযুক্তিবিষয়ক পত্রিকা কারিগর ১৯৯০ সালে সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় পদক প্রদান করে এবং সমাজ কল্যাণ সংঘ তাকে পুরস্কৃত করে। তিনি রোটারি ক্লাব অব রমনার পদকও পান। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০০৩ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। একই বছর বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও বিসিএস কম্পিউটার সিটি তাকে আজীবন সম্মাননা জানায়। (তথ্য ও ছবি : বাংলা উইকিপিডিয়া)
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০
আবদুল গনি