এবারের বন্যায় চাঁদপুরসহ দেশের ৩৩ জেলায় বিভিন্ন খাতে মোট ৫ হাজার ৯৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
২৫ আগস্ট মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে বন্যা পরবর্তী সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
বন্যায় ঘরবাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, গবাদিপশু, শস্যে ক্ষেত ও বীজতলা, মৎস্য খামার, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ লাইন, মোবাইল ফোন লাইন, টেলিফোন টাওয়ার, সড়ক, ব্রিজ- কালভার্ট, বাঁধ, নদী, হাওর, নৌকা-ট্রলার, জাল, বনাঞ্চল, নার্সারি, কৃষি, নলকূপ, জলাধার, হাসপাতাল-ক্লিনিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, চাঁদপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও পাবনা জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেশের সব জেলা থেকে যে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট যেটা ডি-ফরমে পাঠানো হয়, সেটা আমরা পেয়েছি। সেটা পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা ডেকেছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের যে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সেটা নির্ধারণ করা। সেই অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয় তাদের কর্মপরিকল্পনা এখানে পেশ করেছেন। সেটা আমরা নোট করেছি। সেটা নিয়ে আগামীতে পুনর্বাসন পরিকল্পনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালু করতে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেই পরিমাণ অর্থ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) খরচ করতে বলেছেন। আরও অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি বরাদ্দ দেবেন। তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ঘরবাড়ির ওপরে। কারণ পানি নেমে গেছে, এখন লোকজন বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এই সময়ে বাড়িতে গিয়ে যদি তাদের ঘরগুলো ঠিক না থাকে তাহলে তাদের কষ্ট হবে। সেজন্য তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যেকটি মানুষের ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দিতে বলেছেন। সেজন্য টিন ও গৃহ নির্মাণ মজুরি বাবদ নগদ অর্থ তিনি দিতে বলেছেন। সেই ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গত ২৬ জুন থেকে চার দফা বন্যা হয়েছে জানিয়ে ড. এনামুর রহমান বলেন, বন্যাকবলিত জনগণের জন্য আমরা পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সেটা বিতরণ করেছেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য কর্ম সৃজনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণ বাবদ মঞ্জুরি দেয়া হবে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা রাস্তা মেরামত ও পুনর্নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জাইকা থেকে ১১৩ কোটি টাকার একটি সাহায্য পাওয়া গেছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, সেটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে দেয়া হবে। তারা তাদের যে ক্ষয়ক্ষতি আছে সেটা পূরণের জন্য কাজ করে যাবে। আজকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে বন্যাকবলিত জেলায় যে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো তারা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করবে। সড়ক বিভাগ তাদের ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল করবে। কৃষি পুনর্বাসনের জন্য বীজতলা তৈরি ও চারা, সার ও বীজ বিনামূল্যে বিতরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
পানি নেমে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেজন্য মেডিকেল টিমগুলোকে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের কার্যক্রম চলমান রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মৎস্য ও পশু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যাদের মৎস্য খামার ভেসে গেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খোলার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরামত সম্পন্ন করবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এ বছর আর বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক পূর্বাভাস দিয়েছেন, এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আরেকটি বন্যা হতে পারে। অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা আছে।
এবারের বন্যা ১৯৯৮ সালের বন্যার থেকে দীর্ঘস্থায়ী নয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালের বন্যাছিল ৬৯ দিন, এবারের বন্যা ছিল ৪৬ দিন। ক্ষয়ক্ষতিও ১৯৯৮ সালের বন্যার চেয়ে এবার কম।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২৫ আগস্ট ২০২০