মদিনা-মরিয়ম দুই জমজ বোন। চলিত বছরের ১৭ এপ্রিল জন্ম নেয় এই সহোদর। আর এই দুই সন্তান জন্ম নেওয়ার পর মৃত্যু হয় মা আরমিতা বেগমের।
বাবা মনছুর আলী কন্যদেরকে নিয়ে অথৈই সাগরে ডুবতে ডুবতে বেঁচে ছিলেন যৎসামান্য একটি চাকরির আয়ের কারণে। কিন্তু করোনার অজুহাতে সম্প্রতি মদিনা মরিয়মের বাবা চাকরি হারান। চাকরি হারিয়ে অর্থ অভাবে কিনতে পারছেন না মা হারা শিশুর জন্য দুধ। মাকে হারিয়ে এখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় সারাক্ষনই কান্না কাটি করছে কয়েক মাসের ছোট্ট মদিনা মরিয়ম।
হৃদয় বিদারক ঘটনাটি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৯ নম্বর গন্ধর্ব্যপুর (উত্তর) ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ফকির বাড়ির। মদিনা মরিয়মের কষ্টগাঁথা বিয়ষটি স্থানীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জানা য়ায়। তারই সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে কথা হয় মদিনা ও মরিয়মের বাবা মুনছুর আলীর সাথে।
তিনি জানান, জেলার শাহরাস্তি উপজেলার শঙ্করপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে তিনি। বাবার মৃত্যুর পর তিনি নানার বাড়ি হাজীগঞ্জের মোহাম্মদপুরে চলে আসে। এখানে নানার ছোট ভিটাতে স্থানীয় সাংসদ মেজর অব রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়ার সহায়তা সরকারিভাবে একটি বসতঘর পান। সেটিতে মাকে নিয়ে বসবাস করেন। ঢাকায় চাকরি করে বোনদের বিয়ে দিয়েছেন।
ঢাকায় থাকার সুবাদে ঢাকায় বসবাসকারী রংপুরের লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় আরমিতা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। এরমধ্যে সন্তান সম্ভবা স্ত্রী আরমিতাকে চলিত বছরের ১৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করলে তার দুইটি জমজ কণ্যা সন্তান জন্ম দেয়। ওই দিন রাতেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। স্ত্রী শোকে দুই কন্যা সন্তান পাওয়া যেন বিষাধে ভরে উঠে মনছুরের।
একদিকে স্ত্রী বিয়োগ অপরদিকে দুটি শিশুর লালন পালন খাবার খরচ যোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে মনসুরের। সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে মাত্র ৭ হাজার টাকার চাকরিটা করোনার অজুহাতে হারিয়ে ফেলে মনছুর। নিরুপায় হয়ে মুনছুর মদিনা-মরিয়মকে নিয়ে চল আসে নানার বাড়িতে মায়ের কাছে।
মনছুর আরো জানান, সপ্তাহে দুই হাজার টাকার দুধসহ প্রায় মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ লাগে। একদিকে চাকরি নেই, অন্যদিকে শিশুদের দুধ নেই, ঔষধ নাই। এখন আমি কি কবরো?
করেসপন্ডেট, ৮ আগস্ট ২০২০