স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ওরফে মুকুলকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিরপুর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দায়ের করেছেন।
মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ জানান, সাংবাদিক রকিবুল ও মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথির বিরুদ্ধে রকিবুলের স্ত্রী নাজনীন আখতার গত বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করেন। নারী নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রকিবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার আরেক আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নাজনীন আখতার বলেন, ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর শোকে তিনি পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে আবার তাঁরা দু’জন সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর মধ্যে রকিবুল মেহেরুন বিনতে ফেরদৌসের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে কথা বললে স্বামী রকিবুল বিভিন্ন সময়ে নাজনীনকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। একবার রক্তাক্ত অবস্থায় সহকর্মীরা বাসা থেকে নাজনীনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর তাঁর দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়। কিন্তু সন্তানের জন্মের পর থেকে কখনোই খোঁজ নিতেন না মুকুল। ফলে নাজনীন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর স্বামী মেহেরুনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। মেহেরুনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ও স্ত্রীকে কয়েকবার নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন নাজনীন।
নাজনীন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে রকিবুল তাঁর কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন। সর্বশেষ রাজউকে পূর্বাচলে বরাদ্দ পাওয়া একটি প্লটের কিস্তির জন্য তিনি ১৪ লাখ টাকা দেন রকিবুলকে। কিন্তু রকিবুল ওই প্লটটি নিজের নামে লিখে নেন এবং সম্প্রতি সেটা বিক্রিও করে দেন। এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় নাজনীনকে বিভিন্ন সময়ে রকিবুল নির্যাতন করেন।
নাজনীন আখতার বলেন, পরিবারের পরামর্শে ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি এত দিন মামলা করেননি। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই মামলা করলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, এর ন্যায়বিচার দাবি করেন।
অপর সূত্র জানায়, গাজী টিভির বার্তা সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মুকুলের স্ত্রী জনকণ্ঠের সাংবাদিক নাজনিন আক্তার তন্বী একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখীর মৃত্যু শোক সইতে না পেরে গত ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের ৫ তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন। এতে নাজনিন গুরুতর আহত হন। অথচ একইসময়ে সকলকে হতভম্ব করে সদ্য সন্তানহারা সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মুকুল অন্য এক নারীর সঙ্গে পরকিয়ায় লিপ্ত হন।
একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ওয়ারির ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল শাখার শিক্ষিকা ছিলেন মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথি। তার সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে লিভ টুগেদার করছেন সাংবাদিক মুকুল। এরপর বনশ্রী এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে তারা একসঙ্গে থাকতেন। অপরদিকে তার শিশু সন্তান চন্দ্রমুখীকে হারানোর পরপরই হাসপাতালে স্ত্রীকে রেখে এই দু’জন শুরু করে পরকীয়া। এর মাঝে মুকুল আরেক এক সন্তানের বাবা হন। কিন্তু পরকিয়ার মোহে সেই সন্তানও তার বাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত।
শনিবার মুকুলকে আদালতে হাজির করে মামলা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মিরপুর থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এসআই)মাসুদ পারভেজ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে মুকুলকে গ্রেফতার করে মিরপুর থানা পুলিশ।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১৩ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শনিবার ২৭ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur