আর মাত্র কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। অন্যান্য বছরের এই সময়ে চাঁদপুরের কামার শিল্পীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। কিন্তু এ বছর সেই ব্যস্ততা আর নেই। করোনায় তাদের মুখের হাসিও ফুরিয়ে গেছে। অথচ সারা বছরের ধার-দেনা পরিশোধের সময়টাতেই আজ তারা অলস সময় পার করছেন। এতে তাদের ধার-দেনা কমার পরিবর্তে দেনার পরিধি আরো বাড়ছে বলে কামার শিল্পীরা জানায়।
শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের উত্তম স্টোরের মালিক উত্তম চন্দ্র কর্মকার বলেন, আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও প্রতিবছরই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতো এ শিল্প। তাইতো আমরা প্রতিবছরই কোরবানীর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। কারন এই সময়ে সারা বছরের ধার-দেনার পরিশোধের সুযোগ থাকে। কিন্তু এবার করোনায় আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেছে।
চাঁদপুর শহরের তালতলা, বিষ্ণুদী, কুমিল্লা রোড, করিম পাটওয়ারী সড়ক, উকিলপাড়া, বকুলতলা রোড ও পুরান বাজারের বিভিন্ন এলাকার বাজার ও কামারপাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাত-দিন টুং-টাং শব্দ আর নেই। কামার শিল্পীদের দা, ছুড়ি, বটি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বানানোর কাজে কোন ব্যস্ততাও নেই। ফলে দোকানের মালিক থেকে শুরু করে কর্মচারীরাও কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন।
আবার অনেকে বেতন দিতে না পারায় অনেক কর্মচারীকে ছুটিও দিয়ে রেখেছেন। এদের মত মতলব উত্তরের ছেঙ্গাচর বাজার, লুতুরদি, কালিপুর, কালিপুর বাজার, সুজাতপুর, আনন্দবাজার এলাকা ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে।
যদিও অন্যান্য বছরের এই সময়ে দম ফেলারও সময় ছিল না তাদের। দিন-রাত দা, ছুড়ি, বটি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বানাতে নির্ঘূম ব্যস্ততায় সময় কেটেছে। চাহিদামত নির্দিষ্ট সময়ে কামার সরঞ্জামাদি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে ঘুমানোরও সময় পায়নি তারা।
চাঁদপুর শহরের তালতলা এলাকার শংকর স্টোরের মালিক শংকর কর্মকার জানায়, প্রতিবছরই কোরবানীর ঈদের এক দেড় মাস আগ থেকেই শুরু হতো আমাদের ব্যস্ততা। বাধ্য হয়ে এই সময়ে কর্মচারীও বাড়াতে হতো। কিন্তু এ বছর করোনায় কর্মচারী বাড়ানোর পরিবর্তে কমাতে হয়েছে। এরপরও সামলাতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার চাঁদপুর কর্মকার স্টোরের মালিক রবি কর্মকার জানায়, বংশ পরস্পরায় আমরা কামারের কাজ করে আসছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে বর্তমানে এ পেশা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
প্রতিবেদক:শরীফুল ইসলাম,২১ জুলাই ২০২০