করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের রিকশা ও ভ্যানের ভুয়া লাইসেন্স ব্যবসার পর এবার জানা গেল বিআরটিএ’র ভুয়া অনুমতিপত্র সরবরাহের কথাও।
২০১৭ সালে চট্টগ্রামের মেসার্স মেগা মোটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকার রাস্তায় সিএনজি-থ্রি-হুইলার চলাচলের জন্য বিআরটিএ’র ভুয়া অনুমতিপত্র সরবরাহ করে ৯১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সোমবার ১৩ জুলাই বিকেলে নগরের ডবলমুরিং থানায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে ৯১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন মেসার্স মেগা মোটরসের মালিক জিয়া উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই মো. সাইফুদ্দিন।
মামলায় সাহেদ করিম ছাড়াও মেসার্স মেগা মোটরসের সাবেক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহকেও (৬০) আসামি করা হয়েছে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে’।
‘মামলাটি দায়ের করেছেন মেগা মোটরসের ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাইফুদ্দিন। দণ্ডবিধির ৪৬৮, ৪৭১, ৪০৬, ৪২০ ও ৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে। আমরা অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মেগা মোটরর্সের আমদানি করা সিএনজি-থ্রি হুইলার ঢাকা সিটিতে চলাচলের রুট পারমিটসহ চলাচলের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি নিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলে মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম মেগা মোটরর্সের মালিক জিয়া উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ২০১৭ সালে বিভিন্ন দফায় ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নেয়। এ সময় সাহেদ নিজের সঙ্গে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগাযোগ থাকার দাবি করে।
এর মধ্যে ওই বছরের ২২ জানুয়ারি সাহেদ করিমের প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঢাকা অ্যাভিনিউ গেট শাখার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ ৩০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। একই বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার মাধ্যমে আট দফায় মোট ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
এছাড়া চট্টগ্রামে মেসার্স মেগা মোটরর্সের অফিসে এসে ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ১৮ লাখ, ৮ ফেব্রুয়ারি ৬ লাখ, ২০ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ও ৭ মার্চ ৭ লাখ টাকা নগদে গ্রহণ করেন রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম।
মামলার বাদি সাইফুদ্দিন বলেন, ‘দফায় দফায় টাকা নেওয়ার পর ২০১৭ সালের ৫ মার্চ থ্রি-হুইলার যান ঢাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সই করা একটি পরিপত্র মেগা মোটরসকে হস্তান্তর করা হয়। বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করে আমরা জানতে পারি সেটি ভুয়া’।
‘এরপর সাহেদ করিমকে বিষয়টি জানালে তিনি আবারও অনুমতিপত্র এনে দেওয়ার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। কিন্তু সাহেদ করিমের সামাজিক অবস্থানের কথা ভেবে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ সে নিজেকে কখনও প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, কখনও মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্ঠ আবার কখনও লে. কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচয় দিয়েছেন’।
প্রসঙ্গত, গতকাল র্যাব জানায়, রিজেন্টের মালিক সাহেদ ভুয়া করোনার রিপোর্ট থেকে শুরু করে রিকশা ও ভ্যানের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবসা করতেন। শনিবার রিজেন্টের উত্তরায় প্রধান শাখায় অভিযান চালিয়ে পাঁচশ অধিক রিকশা ও দুইশ মতো ভ্যানের ভুয়া লাইসেন্স উদ্ধার করা হয়।
লাইসেন্সগুলোতে ইস্যু দানকারী হিসেবে সাহেদের নামসহ নম্বর ছিল। ভুয়া লাইসেন্স দেওয়া সেই যানবাহনগুলো তুরাগ রানাভোলা এলাকায় চলাচল করত। প্রতি লাইসেন্স বানানোর জন্য দুই হাজার করে টাকা নিতেন ও সেই লাইসেন্সগুলো প্রতি মাসে নবায়ন করার জন্য পাঁচশত টাকা করে নিতেন। এভাবেই আজও সাহেদের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার নতুন নতুন অভিযোগ আসছে।
বার্তা কক্ষ, ১৪ জুলাই ২০২০