ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর ও পাশের আলুবাজার ফেরিঘাট এলাকা। গত কয়েকদিনের মেঘনার ভাঙ্গন ২ শতাধিক বসতবাড়ি, ছোট একটি বাজার এবং বিআইডাব্লিউটিসির বিশাল টার্মিনালের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে আশপাশের আরো কয়েক শ পরিবার। সোমবার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড় চাঁদপুর সদরের ইব্রাহিমপুর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মৌসুমের এ সময় দেশের উত্তরের জনপদ এবং সিলেট অঞ্চলের বানের পানি তীব্র স্রোত নিয়ে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণের সাগরে নামতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়ের ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের অংশবিশেষ। গত কয়েকদিনের তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এই এলাকার নদীপাড়ের ২ শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভাঙছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিসার্ভিসের বিআইডাব্লিউটিসির আলুরবাজার টার্মিনাল। এর মধ্যে পাশের ছোট একটি বাজারও বিলীন হয়ে গেছে। পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় বিগত ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ভাষণ দিয়েছিলেন তা-ও এখন হুমকির মুখে। এর মধ্যে সেই এলাকার অর্ধেক নদীতে চলে গেছে।
৮০ বছরের বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদ। মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের কালের সাক্ষী তিনি। সেই যৌবন থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই পর্যন্ত ১০ বার স্থান পরিবর্তন করেছেন তিনি। তারপরও রাক্ষুসে ভাঙ্গন তার পিছু ছাড়ছে না। তাই এই বয়সেও ভয়ার্ত চোখে নদীর মতিগতি চেয়ে চেয়ে সময় পার করছেন তিনি। পাশের রহিমা খাতুন (৬০)। গত কয়েক বছর আগে পরপারে পাড়ি জমান তার স্বামী। নদী ভাঙ্গনে ভিটেবাড়ি হারিয়ে এখন তিন সন্তানই তার শেষ ভরসা। ইব্রাহিমপুরের এই দুটি পরিবারের মতো দুইশতাধিক পরিবারের এখন একটাই আকুতি, নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। তাই শেষবারের জন্য আমরা একটু আশ্রয় চাই।
স্থানীয় সমাজসেবক সোহাইব আহমেদ বালা বলেন, এই এলাকার অনেক পরিবারই পাশের শরীয়তপুর জেলায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকায় মেঘনায় ভাঙ্গনের শিকার কয়েক শ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মনা গাজী বলেন, ভাঙ্গনের শিকার মানুষের দুর্ভোগের কারণে নিজেকেও বড় অসহায় মনে হয়। তাদের অভাব অভিযোগ শুনেই এখন দিন কাটাচ্ছি।
ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান জানান, বিগত ২০১৬ সালে আলুরবাজার ফেরিঘাটের নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করার পর থেকেই দক্ষিণ পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে এই ভাঙ্গন চলছে। তবে বর্ষা এলে তার তীব্রতা বেড়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, মূলত অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর পানির তীব্র স্রোত এবং ঢেউ পাড়ে আছড়ে পড়ছে। ফলে কোনো অবস্থায় তা রোধ করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গন রক্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান।
চাঁদপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার জানান, ইব্রাহিমপুরের ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আপাতত ভাঙ্গনের শিকার একহাজার মিটার এলাকায় বালিভর্তি জিওটেক্স ফেলা হবে। পরে ভাঙ্গনের কারণ চিহিৃত করে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বার্তা কক্ষ, ৩০ জুন ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur