ঠাকুরগাঁওয়ে দেখা দিয়েছে গরুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিস (চর্মরোগ)। গরুর শরীরে দেখা যাচ্ছে গুটি, ফুলে যাচ্ছে গলা ও পা। এ রোগের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে জেলায় মারা গেছে প্রায় অর্ধশত গরু। এমন রোগে চরম আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারি ও পশু পালনকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পশু পালনকারীরা।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গরু পালনকারী জহিদুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ পূর্বে হঠাৎ করেই তার একটি গরুর শরীরে বিভিন্ন স্থান ফুলে ওঠা শুরু করে এবং ছোট ছোট গুটি বের হয়। ধীরে ধীরে ওই গুটিগুলো পচে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়। এরপর গরুটি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং কয়েক দিনেই গরুটি মৃত্যু বরণ করে। জীবিত থাকাকালীন সুস্থ অবস্থায় গরুটির বাজারে বিক্রি করলে কমপক্ষে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্য হতো। তিনি আরো জানান, তার ইউনিয়নে আরো অনেকের গরু একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
একই উপজেলার আকচা এলাকার নরেন্দ্র বর্মন বলেন, তার ছয়টি গরু রয়েছে। এই বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ করেই একটি গরুর শরীরে গুটি বসন্তের মতো গুটি বের হয় এবং গরুটি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছোঁয়াচে রোগ মনে করে ওই অসুস্থ গরুটিকে তিনি অন্য গরু থেকে পৃথক স্থানে রেখেছেন। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা হলেও কেউ গরু দেখতে আসেনি। পরে পরে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসক বলছে আক্রান্ত গরু ভালো হতে কিছুটা সময় লাগবে।
সদর উপজেলা নিশ্চিন্তপুর শাহপাড়া আরডিআরএস মোড় এলাকার মাসুমা খানম জানান, তার খামারে বিদেশি ১২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুর শরীরে হঠাৎ করেই গুটি গুটি বলের মতো বের হয় এবং গরুর পায়ের গোড়ালির নিচে অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে তিনি চিকিৎসা করাচ্ছেন। তবে তার এলাকায় আরো অনেকের গরুর একই সমস্যা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পশুপালন বিভাগ থেকে কেউই কোনো খোঁজকবর নিতে আসেনি।
রাণীশংকৈল উপজেলার গরু খামারি আব্দুর রহিম জানান, এ রোগটি একেবারেই নতুন, যা তিনি এর পূর্বে কখনোই দেখেন নাই। তার খামারে দুটি গরুর এই রোগ দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি গরু বর্তমানে মোটামুটি সুস্থ হয়েছে এবং অন্যটি মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, প্রথমে গরুর শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়। পরে গুটিগুলোতে ইনফেকশন হয়ে দগদগে ঘা সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান থেকে চামড়া ও মাংস পচে গিয়ে খসে খসে পড়ে। গরুর শরীরে ওই সময় জ্বর ও ব্যথা থাকার কারণে খাওয়া বন্ধ করে দিলে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কোনো চিকিৎসা না থাকায় আক্রান্ত গরু অনেক সময় মারাও যায়। এরই মধ্যে ওই উপজেলায় বেশ কয়েকটি গরু মারাও গিয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার গরু পালনকারী মুক্তারুল ইসলাম জানান, তার গরুর এমন অসুখে স্থানীয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ বা পরামর্শ দেননি। একই অভিযোগ করেন পীরগঞ্জ উপজেলার অনেকেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গবাদিপশুর এই রোগ ছড়ায় মশা ও মাছির মাধ্যমে। এ রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত পশুর লক্ষণ অনুযায়ী প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন ও সোডা এবং গোটপক্স ভ্যাক্সিন প্রয়োগে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্ত পশু সুস্থ হতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগাতে পারে। এ ছাড়াও এ রোগটির প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গরুকে জিংক ও ভিটামিন সি খাওয়ানোর জন্য খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার পশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং ৩৫ হাজার ৫০০ গরুকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। (কালের কন্ঠ)
বার্তা কক্ষ,২৯ জুন ২০২০