নিউজ ডেস্ক, চাঁদপুর টাইমস :
বিয়ের পর একটি সন্তানের জন্য ব্যাকুল ছিলেন মো. সোহেল ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতি। টানা নয় বছরের অধীর অপেক্ষা। তারপর এল আরাফাত হোসেন। এ যেন আকাশের চাঁদ। ছেলেকে বুকে আগলে রাখতে শুরু করেন দুজন। কারো অশুভ নজর বা অপয়া বাতাস যাতে না লাগে, এ জন্য ছেলের সঙ্গে সব সময় বড় পাতিলে ছাইচাপা আগুন রাখতেন জান্নাতুল। এ আগুন অশুভ প্রভাব দূর করবে—এটাই ছিল মন আঁকড়ে থাকা বিশ্বাস।
আরাফাতের বয়স তখন তিন দিন। বাড়ির উঠানে ছেলেকে কম্বলে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন জান্নাতুল। এক পর্যায়ে শারীরিক দুর্বলতার কারণে মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। পড়েই জ্ঞান হারান। কম্বলসহ কোলের সন্তান পড়ল গিয়ে পাতিলে রাখা ছাইচাপা আগুনে। জ্ঞান ফেরার পর জান্নাতুল দেখেন, ছেলের মুখ, বুক, হাত-পা পুড়ে গেছে।
ছেলেকে অশুভ প্রভাব থেকে বাঁচাতে বাবা-মা যে আগুনের ওপর ভরসা করেছিলেন, সে আগুনই সর্বনাশ করেছে তার। এরমধ্যে আড়াই বছর পার হয়েছে। এখন সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটছে ছোট্ট আরাফাতের।
নোয়াখালী সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে এই দম্পতির বাস। সেখান থেকে দফায় দফায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন উইনিটে আসতে হচ্ছে তাঁদের। এবার বার্ন ইউনিটে এসেছেন প্রায় দুই মাস হলো। একবার পাঁচ মাস থাকতে হয়েছিল। এ পর্যন্ত আরাফাতের শরীরে পাঁচটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। লাগবে আরও সাত থেকে আটটি অস্ত্রোপচার। তা করতে হচ্ছে রয়েসয়ে। কয়েক দিন আগে অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল। আরাফাতের ঠান্ডা লাগায় তা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী দিন ঠিক হয়েছে আগামী শনিবার।
মঙ্গলবার বার্ন ইউনিটের পাঁচ তলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, আরাফাত তার বয়সী অন্য সব শিশুর মতো খেলতে চাইছে, কিন্তু আগুনে পুড়ে এক পা ছোট হয়ে যাওয়ায় সে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। দুই হাত বাঁকা হয়ে উল্টে গেছে। ডান হাতে চারটি আঙুল, বাম হাতে দুই আঙুল জোড়া লেগে একাকার। নাক মুখের ভেতরের দিকে দেবে গেছে। মুখ এক দিকে বেঁকে গেছে।
আরাফাত চাকা লাগানো একটি পটিতে গিয়ে বসে। প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য নয়। এটি তার সঙ্গী। পটিতে বসে হাসপাতালের মেঝেতে পা দিয়ে ঠেলতে থাকে। পটি ছুটে চলে। আরাফাত খিলখিলিয়ে হাসে। উল্টে যাওয়া হাতেই পানি খেতে পারে। বাবা ও মাকে ডাকে। এতেই বাবা মায়ের আনন্দ। তবে তা ক্ষণিকের। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিচ্ছেন, ছেলের শরীরের কিছু অংশ তাঁরা ঠিক করে দিতে পারবেন। তবে সময় লাগবে। বাসের সহকারীর কাজ করেন সোহেল। স্বল্প আয়ে কত দিন ছেলের চিকিৎসা চালাতে পারবেন—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বার্ন ইউনিটে একজনের খাবার পাওয়া যায়। আরেকজনের খাবার কিনতে হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খেতে পারেনি আরাফাত। বাইরের কেনা দুধই ভরসা। কিন্তু সে দুধের অনেক দাম। এই খরচ মেটানো আরাফাতের জন্য সহজ কথা নয়। আর একেকটি অস্ত্রোপচারে কম করে হলেও ১৫ হাজার টাকা লাগে। রয়েছে নোয়াখালী থেকে আসা-যাওয়ার ঝক্কি। এসব কাজে ব্যস্ত থাকায় পেশাগত কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে সোহেলের।
জান্নাতুল বলেন, ‘আমার অনেক সাধনার বাচ্চা। বাচ্চা বাড়িতেই হয়। আমার রক্তশূন্যতা ছিল। ঘটনার দিন মাথা ঘুইরা পইড়া যাই। তারপর যা হওনের—হইছে। আমার ছেলেরে দেশের বাইরে নিয়া চিকিৎসা করাইলে মনে হয় ভালো হইত। একটা হাতও যদি ভালা করন যায়…! ’
সোহেল ও জান্নাতুলের ছেলেকে নিয়ে কষ্ট দেখে তাঁদের গ্রামের মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন হয়েছেন। নবজাতক এলে এখন অনেকেই আগুন রাখার নিয়ম পালন করছেন না।
সোহেল তাঁর পরিবারের বড় ছেলে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। এ পর্যন্ত আরাফাতের চিকিৎসায় বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। তাঁদের ক্ষমতা সীমিত। তাই ছেলের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। কেউ ছোট আরাফাতের দিকে সহায়তার হাত বাড়াতে চাইলে আরাফাতের বাবা মো. সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁর মুঠোফোন নম্বর-০১৮১২৮২৪৮২৯।
আপডেট: বাংলাদেশ সময় : ১১ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বুধবার ২৪ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:২০ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur