চাঁদপুরের কচুয়া পাইলট স্কুলের সামনে থেকে ৭ জুন ২ বছরের আনিসা নামে এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলাবার রাতে ১ জনকে আটক করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর পূর্বে কচুয়া মধুপুর গ্রামের আব্দুল মালেক তালুকদারের ছেলে মোঃ আরিফ হোসেনের সাথে একই উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের মো: কবির হোসেনের মেয়ে জান্নাত (২২)এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়।এর পর গত তিন মাস পূর্বে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
৭ জুন রোববার আনিসার বাবা আরিফ তার মেয়েকে দেখার জন্য নানিকে ফোন দিয়ে তাকে কচুয়া নিয়ে আসার জন্য বলেন, আনিসার নানী ও তার ‘মা’ ঐ দিন সকাল সাড়ে ১১ টার সময় শিশুটিকে নিয়ে কচুয়া পাইলট স্কুলের সামনে আসেন। সেখানে শিশুর বাবা আরিফ চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে এবং তার বাবা, বোন ও ভগ্নিপতি দেখবে বলে চোখের আড়ালে নিয়ে যায়, মুহূর্তের মধ্যেই তার বাবা ও পরিবারের সদস্যরা মিলে আনিসাকে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
সাথে সাথে আনিসার নানি আরিফের মোবাইলে ফোন দিলে আরিফ বলে, আমার সন্তান আমি নিয়েছি, আমি ওকে আর দেব না। এই বলে লাইন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয়।
এই ঘটনায় ৮ জুন আনিসার নানী হাবিবা বেগম কচুয়া থানায় ৪ জনকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিবাদীরা হলেন- মো: আরিফ হোসেন তালুকদার, তার বাবা মোঃ মালেক তালুকদার, তার বোন নাছরিন এবং নাছরিনে স্বামী চাঁদপুরের জুতার ব্যবসায়ী মোঃ কাওছার।
পরবর্তীতে আরিফদের বাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বহু খোঁজ নিলেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। আনিসাকে হারিয়ে তার দুগ্ধবতী ‘মা’ জান্নাত অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই কচুয়া থানা পুলিশ আরিফের বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। দুগ্ধ শিশুর জন্য তার দুগ্ধবতী ‘মা’ জান্নাত অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পরিবারের লোকজন তাকে পাগলের মত খুঁজতে থাকে।
৯ জুন মঙ্গলবার শিশুর ‘মা’ শুনতে পারে তার মেয়ে চাঁদপুরে আরিফের ভগ্নিপতি কাউসার এর বাসায় তার শিশু কন্যা রয়েছে।
শোনার সাথে সাথে তার পরিবারের লোকজন সহ শহরের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আরিফের ভগ্নিপতি কাউসার হোসেনের কালিবাড়ি জুতার দোকানে যান। কিন্তু কাউসার কোন মতেই স্বীকার করেনি তার বাসায় যে বাচ্চা রয়েছে, পরবর্তীতে স্থানীয়রা ও স্বজনরা বিকালে তার বাসায় যান সেখানে গিয়ে আনিসাকে পাওয়া যায়নি। কাউছার বাসায় আশার পূর্বে সুকৌশলে বাচ্চাটিকে সড়িয়ে নিতে বলেন।
পরবর্তীতে কাউছারের বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনকে অবহিত করলে বাড়ির মালিক বলেন, কিছুক্ষণ আগেও বাচ্চাটি এখানে ছিল আপনারা আসার ২০ মিনিট আগে শিশুটিকে সড়িয়ে ফেলে।
এ ঘটনায় কথা কাটাকাটি হলে কাউছারের ভাড়া বাসার সামনে অনেক লোক জন জরো হয়। এরপর বাসার মালিক, স্থানিয় লোকজন ও আরিফের ভগ্নিপতি কাউসার এবং কাউসারের চাচা চাঁদপুর বারের সিনিয়র আইনজীবীসহ কথাদেয় রাত ৯ টার মধ্যে শিশুটি তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিবে বলে আস্বস্ত করেন। বিষয়টি কচুয়া থানাকে অবহিত করা হয়।
পরবর্তীতে ৯ টার দিকে কাউসারকে ফোন দিলে তিনি এলোমেলো কথা বার্তা শুরু করে। এর ফলে পুনরায় শিশুর মা ও তার স্বজনরা কাউসারের বাসার সামনে যায়। সেখানে আবারও লোকজন জরো হতে শুরু করে। শিশুর স্বজনরা চাঁদপুর মডেল থানাকে অবহিত করে। তখন রাত আনুমানিক ১১টা বাজে, বাড়ির মালিক তার বাসার সামনে হৈচৈ না করার জন্য উভয় পক্ষকে বলেন। এরপর সবাই বাসার সামনে ট্রাক রোড বটতলায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন।
এরইমধ্যে কাউসার এর স্ত্রী নাছরিন অপহরণ এর অভিযোগ এনে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে তার স্বামীকে অপহরণ করেছে বলে জানান। এমন সময় চাঁদপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএসআই সুদর্শন কুড়ি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং কাউসারকে অপহরণের বিষয়টি সঠিক কিনা বাড়ির মালিককে ও স্থানীয় দোকানদারকে জিজ্ঞেস করেন এতে করে তারা বলেন, এখানে এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই তবে যারা বলেছে কাউসারকে অপহরন করেছে তারাই দুই বছরের শিশুকে অপহরন করেছে।
তাদের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় অভিযোগ রয়েছে, তারা উল্টো তাদেরকে ফাসানোর জন্য ত্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে প্রশাসনকে হয়রানি করছে। কাউছারকে নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সুদর্শন চাঁদপুর মডেল থানায় নিয়ে যায় এবং পরবর্তিতে ১০ জুন বুধবার দুপুরে শিশুটিকে চাঁদপুর মডেল থানায় হাজির করে।
এরপর প্রশাসনের লোকজনসহ উভয় পরিবারের লোকজন বিষয়টি মিমাংসা করে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। বাচ্চাকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি মা জান্নাত।
কাউসারের স্ত্রী’র ৯৯৯ এর অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়। ভুল শিকার করে তার জিম্মায় তার স্বামী কাউছারকে দিয়ে দেওয়া হয়।
স্টাফ করেসপন্ডেট,১০ জুন ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur