দেশে করোনায় সুস্থতার হার বাড়ছে। সংক্রমণের ৮২তম দিনে ২৮ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুস্থতার হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। সংক্রমণ বেশি এমন দেশগুলোর তুলনায় মৃত্যুহারও কম বাংলাদেশে। এই তথ্য সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ৪০ হাজার ৩২১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮ হাজার ৪২৫ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় গেছেন। অবশ্য আক্রান্তদের বড় অংশ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে। বাসায় চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের কতজন সুস্থ হয়েছেন, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। সেটি যোগ হলে সুস্থতার হার আরও বেশি হবে।
গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বে প্রথম চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চীনের সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ মিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, মৃদু সংক্রমণের (মাইল্ড কেস) ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। আর যেসব রোগীর অবস্থা জটিল বা অন্য সংকটাপন্ন রোগ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ।
দেশে করোনা রোগীদের সুস্থ হওয়ার হার বাড়ছে। সংক্রমণের ৮২তম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুস্থতার হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। সংক্রমণ বেশি এমন দেশগুলোর তুলনায় মৃত্যুহারও কম বাংলাদেশে। এই তথ্য সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট ৪০ হাজার ৩২১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮ হাজার ৪২৫ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় গেছেন। অবশ্য আক্রান্তদের বড় অংশ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে। বাসায় চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের কতজন সুস্থ হয়েছেন, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। সেটি যোগ হলে সুস্থতার হার আরও বেশি হবে।
গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বে প্রথম চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চীনের সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ মিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, মৃদু সংক্রমণের (মাইল্ড কেস) ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। আর যেসব রোগীর অবস্থা জটিল বা অন্য সংকটাপন্ন রোগ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সময় যত গড়াচ্ছে, সুস্থতার হার তত বাড়ছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। ওই দিন থেকে ২ মে পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিলেন ৮ হাজার ৭৯০ জন। সুস্থ হয়েছিলেন ১৭৭ জন। সুস্থতার হার ছিল ২ শতাংশ। তখন পর্যন্ত রোগীদের ২৪ ঘণ্টায় পরপর দুটি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত না হলে রোগীকে সুস্থ বলা হতো এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতো। ৩ মে থেকে সুস্থতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়, ওষুধ ছাড়া টানা ৩ দিন জ্বর না থাকলে, কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া যাবে। তবে রোগীকে বাড়িতে বা সরকারনির্ধারিত স্থানে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে এবং সম্ভব হলে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
এই পরিবর্তন আনার পর সুস্থতার হার আগের তুলনায় বাড়তে থাকে। ৩ মে সুস্থতার হার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ১০ মে পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান। আর গতকাল পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্তের ৮২তম দিনে দেশে সুস্থতার হার (হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া) বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশে।
দেশে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীদের বড় অংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন নিজ নিজ বাসায় থেকে। এ সংখ্যা কত এবং তাঁদের কতজন এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি। এটি নিয়ে এখনো কাজ করছে অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বুধবার বলেন, রোগীদের বেশির ভাগ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই উপসর্গ মৃদু। যাঁদের মাঝারি উপসর্গ এবং অবস্থা জটিল, তাঁরা মূলত বেশি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আবার বাড়িতে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন রাখা) থাকার সমস্যার কারণেও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এরপরই পাকিস্তানের অবস্থান। এই দুই দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশেও সুস্থতার হার ওই দুটি দেশের কাছাকাছি। তবে মৃত্যুর হার ওই দুই দেশের চেয়ে কম।
বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট ‘কোভিড-১৯ ট্র্যাকার ডট জিওভি ডট বিডি’র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংক্রমণ শনাক্তের ৮২তম দিনে (২১ এপ্রিল) ভারতে মোট আক্রান্ত রোগী ছিলেন ২০ হাজার ৮০ জন। সুস্থ হয়েছিলেন ৩ হাজার ৯৭৫ জন। সুস্থতার হার ছিল ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে মৃত্যুর হার ছিল ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। আর গত বুধবার পর্যন্ত ভারতে সুস্থতার হার ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সংক্রমণ শনাক্তের ৮২তম দিনে (১১ মে) পাকিস্তানে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৩২ হাজার ৮১ জন। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছিলেন ৮ হাজার ৫৫৫ জন। ওই দিন পর্যন্ত সুস্থতার হার ছিল ২৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ছিল ২ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বুধবার পর্যন্ত পাকিস্তানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ১৫১। এর মধ্যে সুস্থতার হার ৩২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আর মৃত্যুর হার ২ শতাংশ।
ইউরোপ, আমেরিকার যেসব দেশে সংক্রমণ বেশি, সেসব দেশেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থতার হার বাড়ছে। ওই সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনো মৃত্যুর হার কম। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছেন ৫৫৯ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মৃত্যুর হার বেশি ইউরোপের দেশগুলোতে। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বেলজিয়ামে মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। ফ্রান্সে ১৫ দশমিক ৬, ইতালিতে ১৪ দশমিক ৩, যুক্তরাজ্যে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিশ্বের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস। তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৮ লাখ ৭ হাজার ১৬৬। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৫ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ জন। আর মৃত্যু হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৭ জনের। অর্থাৎ সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় সুস্থতার হার ৪৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।
৮০-ঊর্ধ্বরাও সুস্থ হচ্ছেন
চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যু বেশি। তবে বয়স্করা এমনকি শতবর্ষী ব্যক্তিও করোনা জয় করেছেন। বাংলাদেশেও এমন নজির আছে। ৮ মে সুস্থ হয়ে ঢাকার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন ৮৫ বছর বয়সী এক নারী। একই দিন সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন বাউফলের ৮০ বছর বয়সী এক নারী। এর আগে ৩০ এপ্রিল রংপুরে হাসপাতালে ৯ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন বদরগঞ্জের ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। ৩০ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছিল, ওই দিন ৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের একজনের বয়স ৮০ বছর এবং দুজনের বয়স ৬০–এর বেশি।
আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, মূলত যাঁদের বয়স বেশি এবং একই সঙ্গে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, তাঁদেরই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকিটা বেশি। যাঁদের লক্ষণ মৃদু এবং অন্যান্য রোগ নেই, তাঁদের সবার সুস্থ হওয়ার কথা। আবার বয়স বেশি হলেও অন্যান্য রোগ কম থাকা ব্যক্তিদের অনেকে বাসায় থেকেও সুস্থ হচ্ছেন। যাঁদের শ্বাসকষ্ট তীব্র, তাঁদের সুস্থ করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। সুস্থতার হার যাতে আরও বাড়ে, সেদিকে জোর দিতে হবে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ, ২৯ মে ২০২০