দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালে নেওয়া রোগীদের একাংশের জন্য জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর বা কৃত্রিম পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার যন্ত্র অপরিহার্য হয়ে পড়বে। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এই যন্ত্রের জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুসারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালে এই যন্ত্র পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দেশেও এই যন্ত্রের জন্য হাহাকার পড়তে পারে। সেদিকে নজর রেখে বিশেষজ্ঞরা এখন থেকেই দেশে আইসিইউ তথা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র – ভেন্টিলেটর ও প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সেটআপের মতো জীবনরক্ষাকারী সামগ্রীর জোগান বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েকটি দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে যেহেতু অন্য দেশগুলোতেও একই সংকট, তাই খুব একটা আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোথাও কোথাও থেকে আশ্বাস পাচ্ছি। দেখি কতটা সংগ্রহ করতে পারি।’
সরকারি হিসাব অনুসারে দেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল সব মিলিয়ে আইসিইউ রয়েছে এক হাজার ৪০০টি। তবে এর বড় অংশই অন্য রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রেখে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করোনায় আক্রান্তদের জন্য রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। ফলে বিদ্যমান আইসিইউ থেকে বড়জোর দেড় শ আইসিইউ এ কাজের জন্য পাওয়া যাবে। অন্যদিকে সরকার এবার শুধু করোনার জন্য ৫০টি ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে ৩৪টি সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতালে সংযোজন করা হয়েছে এবং ১২টি হাতে আছে, যেগুেলো প্রয়োজনমতো সংযোজন করা হবে। এই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করার মতো ভেন্টিলেটরের আগের কিছু অক্সিজেন সামগ্রীর ওপরও জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ‘বিশ্বপরিস্থিতি অনুসারে মোট করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাকি ২০ শতাংশের হাসপাতালে যেতে হয় জটিলতার কারণে। তাদের মধ্যে আবার ১৫ শতাংশ সাধারণ অক্সিজেন বা অন্যান্য সাপোর্ট দিয়ে সেরে ওঠে। বাকি ৫ শতাংশের আইসিইউ বা ভেন্টিলেটর দরকার হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এমন পরিসংখ্যান অনুসারে যে প্রস্তুতি আছে, তা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে আমি জানি।’
রোগতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে এমনিতেই আইসিইউয়ের সংকট। তার ওপরে এমন পরিস্থিতিতে সংকট আরো বাড়বে। ফলে এখন থেকে একদিকে রোগী খুঁজে বের করা জরুরি, অন্যদিকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেটরের সংস্থান চালিয়ে যেতে হবে।’
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ভেন্টিলেটর হচ্ছে আমাদের একেবারেই জীবন রক্ষার শেষ অস্ত্র। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে এর আগের ব্যবস্থাপনাগুলো—বিশেষ করে অক্সিজেনসহ অন্য উপকরণগুলোর পর্যাপ্ত ব্যবহারের। সেগুলোতেও যাদের কাজ করবে না তাদের জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হবে। আমরা অনেকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যত বেশিসংখ্যক ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করা যায়, কিন্তু তাতে খুব একটা সাড়া মিলছে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত মোট আটটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরি রাখা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সরকারের নিজস্ব এবং তিনটি হাসপাতাল দিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি আরো দু-তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, করোনা রোগীদের জন্য সংরক্ষিত আইসিইউ ১৫০টি। এর মধ্যে ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আইসিইউ আছে ২৬টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আছে ৩০টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ১৮টি, রিজেন্ট গ্রুপের হাসপাতালে ছয়টি, সাজিদা ফাউন্ডেশনের ৫০ শয্যার একটি হাসপাতালে পাঁচটি এবং মুন্সীগঞ্জে ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনটি আইসিইউ রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আরো চারটি হাসপাতাল করোনার জন্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে, যেখানে ৪০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে মোট পাঁচ হাজার ৬৫১টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্থানীয়ভাবে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার জন্য। এর মধ্যে সর্বোচ্চ এক হাজার ১৪৯টি চট্টগ্রামে, এক হাজার ৮০টি ঢাকায়, ৮৯৮টি সিলেটে, ৭৯৪টি রাজশাহীতে, খুলনায় ৭০২টি, বরিশালে ৫৭২টি এবং রংপুরে ৪৫৬টি। এগুলোর মধ্যেও কিছুসংখ্যক আইসিইউ বেড ব্যবহার করা হবে প্রয়োজনমতো। (কালেরকণ্ঠ)
৭ এপ্রিল ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur