সাধারণ সাবান ৮ মার্চ দেশে নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পাশাপাশি দোকান থেকে এসব পণ্য উধাও।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাবানের চেয়ে করোনার জীবাণু ধ্বংসে কার্যকরি আর কিছু নেই। এ জীবাণুনাশের জন্য কোনও বিশেষায়িত সাবানের দরকার নেই। বরং সাধারণ সাবান কোভিড-১৯ এর জীবাণু ধ্বংসে সবচেয়ে বেশি কার্যকরি।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা.মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন যে সংবাদ সম্মেলন করি সেখানে করোনা প্রতিরোধের জন্য যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা আমরা বলে থাকি,সেখানে প্রথমেই বলা হয় সাবান পানির কথা। তাতে বলা হয় অন্তত ২০ সেকেন্ড সাবান মিশ্রিত পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধুয়ে ফেললে এ রোগের জীবাণু থেকে মুক্ত হওয়া যায়।’
সাবান পানি নাকি হ্যান্ড স্যানিটাইজার কোনটা প্রয়োজন—এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন,‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনও দরকারই নেই। বারবার বলছি, সবচেয়ে ভালো সাবান পানি।’
তিনি বলেন,‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার কোনও দরকারই নেই। মানুষ এগুলো বেশি দামে কিনে স্টক করছে। কিন্তু এর কোনও যুক্তিই নেই। সিম্পল সাবান পানি ব্যবহার করলেই চলবে। কাপড় কাঁচা সাবান হলেও চলবে। তবে গ্লিসারিন মুক্ত হলে একটু ভালো হয়।’
কাপড় কাঁচা সাবান কেন ভালো জানতে চাইলে ডা আব্দুল্লাহ বলেন,‘এ সাবানে ক্ষার থাকে, যাতে জীবাণুটা দ্রুত মরে যায়।’
সাবান যত সাধারণ,তত ভালো মন্তব্য করে আইইডিসিআর’র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা.মাহমুদুর রহমান বলেন,‘প্রথম কথা হচ্ছে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। যে কোনও ধরনের গুঁড়া সাবান কেবল গ্লিসারিন সোপ ছাড়া সব সাবান অনেক বেশি ইফেক্টিভ অন্য কিছুর চাইতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে পানি ও সাবানের ব্যবস্থা নেই কেবলমাত্র তখনই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য বলা হচ্ছে যাতে ওই সময়টা সুরক্ষিত থাকা যায়। তবে যেখানে পানি ও সাবান রয়েছে, সেখানে এটা ব্যবহার করাই ভালো।’
অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ঘর জীবাণুমুক্ত করতে বাসার ফ্লোর, ফার্নিচার, টেবিল, দরোজার হাতলও সাবান পানি দিয়ে মুছে নেয়া উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিকমেন্ডেড ‘ক্লোরক্স’ (বড় বড় কনটেইনাইরে বাজারে রয়েছে, যেটা দিয়ে হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত করা হয়) দিয়ে ফ্লোর মুছে নেওয়া যায় তাহলে পারিপার্শ্বিক অবস্থাও পরিষ্কার থাকবে এবং জীবাণুমুক্তও হবে।’
ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘করোনার জীবণু ধ্বংসকারীদের মধ্যে অন্যতম সাবান-পানি, হ্যান্ড রাব, ক্লোরক্স-লাইজল (ঘর পরিষ্কারের লিকুইড) তার মধ্যে অন্যতম। ক্লোরক্স-লাইজল পাতলা কাপড়ে ভিজিয়ে নিয়ে ফার্নিচার মোছার কাজও করা যায়, তাতে এসব জায়গাও পরিষ্কার হবে।
কিন্তু বেস্ট হচ্ছে সাবান-পানি। বালতিতে গুঁড়ো সাবান মিশিয়ে কাপড় ভিজিয়ে ফানির্চার মুছে নিয়ে আরেকটি কাপড় পানিতে ভিজিয়ে পরে মুছে নিলে এর মধ্যে আর কোনও জীবাণু থাকার সুযোগই নেই। এটা ক্লিনিংয়ের জন্য বেস্ট।
তিনি বলেন,সাবান দিয়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। তারপর হয়তো কেউ চাইলে স্যানিটাইজার দিতে পারেন হাতে।
এ বিশষেজ্ঞ বলেন,‘আমরা ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কথা বলছি। কিন্তু ঘর-অফিস যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে সেখানে ইনফেকশন ছড়াবে। দরজা-বাথরুমের হাতলও পরিষ্কার করতে হবে। আর অফিসের ক্ষেত্রে ভেতরের সব দরজা খুলে রাখতে হবে, যাতে হাত দিয়ে দরজা ধরতে না হয়। অফিসের বায়োমেট্রিক হাজিরাও বন্ধ করতে হবে। এগুলো খুবই ছোট ছোট মেজার-কিন্তু এগুলোই কিন্তু সবচেয়ে হেলপ করবে।’
ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন,‘সভা-সমাবেশ আমরা এখনও বন্ধ করতে পারিনি। ইলেকশন ক্যাম্পেইন চলছে। এসবও কিন্তু ক্ষতির কারণ। তাই এসব অ্যাভয়েড করতে হবে। ’
বার্তা কক্ষ , ১৪ মার্চ ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur