Home / জাতীয় / দেশি কিংবা বিদেশি বিমানবন্দরে নেমেই জানবে এটা ‘ল্যান্ড অব মুজিব’
‘ল্যান্ড অব মুজিব’

দেশি কিংবা বিদেশি বিমানবন্দরে নেমেই জানবে এটা ‘ল্যান্ড অব মুজিব’

দেশি হন কিংবা বিদেশি। একজন যাত্রী প্লেন থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেই বুঝতে পারবেন- এটি ‘ল্যান্ড অব মুজিব’।

বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে বর্ণিল আলোকসজ্জা, প্রোজেক্টরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ওয়ালপেপার, বিলবোর্ডসহ যাবতীয় সাজ-সজ্জা চোখ ধাঁধিয়ে দেবে আগত যাত্রীদের। আসন্ন মুজিববর্ষ উপলক্ষে এমনই বর্ণিল সাজে সাজানো হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষ উদযাপন হবে আগামী ১৭ মার্চ থেকে। বছরব্যাপী এ আয়োজনের শুরুর আনুষ্ঠানিকতায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের।

বিমানবন্দর সূত্র বলছে, মুজিববর্ষের আয়োজন ঘিরে শাহজালালে সর্বকালের সেরা ব্র্যান্ডিং ও সাজসজ্জার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের বাইরের অংশ থেকে শুরু করে প্রতিটি বোর্ডিং ব্রিজে লাগানো হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং তার জীবনচিত্র। প্রোজেক্টর বা ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করে সেগুলোতে প্রদর্শিত হবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র।

বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে শাহজালাল বিমানবন্দরে তিনটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ব্র্যান্ডিং করা হবে। এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে সর্বাগ্রে থাকবেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু। দ্বিতীয়টি, বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনের এ যাবতকালের উন্নয়ন এবং তৃতীয়ত, বিউটিফুল বাংলাদেশ। বিমানবন্দরের ওয়ালপেপার ও বিলবোর্ডে এসব বিষয় থাকবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা থাকবে বিলবোর্ডে। গোটা বিমানবন্দরজুড়ে থাকবে বর্ণিল আলোকসজ্জা।

বিমানবন্দরের বহির্গমন বা ডিপার্চার লাউঞ্জে থাকবে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থাকবে। বিদেশগামী অপেক্ষমানযাত্রীরা সানন্দে এগুলো পড়তে পারবেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। যেগুলো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এমন বর্ণিল আয়োজনের বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, ‘মুজিববর্ষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ যাবতকালের সবচেয়ে সেরা সাজসজ্জা করা হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও জীবনচিত্র, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশনের নানা উন্নয়ন তুলে ধরা হবে বিমানবন্দরজুড়ে। যেন যে কেউ বিমানবন্দরে প্রবেশ করলেই বোঝেন, এটা ল্যান্ড অব মুজিব।’

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, সিভিল এভিয়েশনের এ যাবতকালের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও বিভিন্ন অর্জন ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে প্রদর্শনের জন্য ইতোমধ্যে দুই মিনিটের ভিডিও ক্লিপ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া লাউঞ্জে বঙ্গবন্ধুর কর্নারের জন্য ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কার্যক্রম, বেবিচকের অর্জন এবং বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের স্থিরচিত্র ও তথ্যাদি সহকারে পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র প্রস্তুতের কাজ প্রায় শেষ।

অন্যদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরে ১৭ থেকে ২৩ মার্চ বিশেষ সেবাসপ্তাহ পালন করা হবে। এ সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য আলাদা তথ্য ও সেবার বুথ স্থাপন করা হবে। হবে আলাদা ওয়েটিং লাউঞ্জও। এর আগে ১১ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হবে।

এছাড়াও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বেবিচক। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে সভা করেছে তারা। এয়ারলাইন্সগুলো কে কীভাবে মুজিববর্ষ পালন করবে, শিগগির তা বেবিচককে জানাবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বেবিচকের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসভিত্তিক চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়েছে।

আগামী ১৭ মার্চ দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুজিববর্ষ অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবছর উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হবে। একইসঙ্গে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ উদযাপন করা হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও।

মুজিববর্ষের আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স জায়েদ আল নাহিয়ান, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, ওআইসি মহাসচিব আমির মুসা, ইউনেস্কোর সাবেক নির্বাহী প্রধান ইরিনা বুকোভা, বঙ্গবন্ধুর নাতনি ব্রিটেনের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক, লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রুশনারা আলীসহ বিশ্ববরেণ্য রাজনৈতিক ও তারকাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনেকে মৌখিকভাবে আসতে সম্মতি জানিয়েছেন।

এছাড়া মুজিববর্ষে এশিয়া একাদশ ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে। ১৮ ও ২১ মার্চ অনুষ্ঠেয় এ দুই খেলায় ভারতের বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, মোহাম্মদ শামি ও কুলদীপ যাদবসহ বিশ্বের নামিদামি ক্রিকেটাররা অংশ নেবেন।

নানা আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই ঢাকায় প্রবেশ করবেন বিধায় দেশের প্রধান প্রবেশপথ এমন সাজে সাজানো হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,৬ মার্চ ২০২০