গ্যাস প্রপ্তির খবরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সর্বশেষ গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো কুমিল্লার ‘শ্রীকাইল ইস্ট-১’ অনুসন্ধান ক’প।মঙ্গলবার রাতে এখানে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। বিগত দুই বছরে বাংলাদেশের নতুন কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হওয়ায় ”শ্রীকাইল ইস্ট-১” ক্ষেত্রে গ্যাস প্রাপ্তি মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার বলে মনে করছেন পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লার ‘শ্রীকাইল গ্যাস ক্ষেত্রের আওতায় ২০১৯ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার নবীনগর উপজেলার হাজিপুরে ”শ্রীকাইল ইস্ট-১’-নামে নতুন এ গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পে কাজ শুরু করে রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
মঙ্গলবার রাতে এখানে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা করে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষনন কর্মকর্তা বলেন, খননের গভীরতা ৩ হাজার ৪৮২ মিটার। আর যে জ্যোনের মধ্যে গ্যাসটি পাওয়া গেছে তা আন্দাজ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫ থেকে ৩ হাজার ৭০ মিটার গভীরের মধ্যে। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ডিএসটি বা ড্রিল স্টিম টেস্ট বা ডিএসটি এর মাধ্যমে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এখন ডিএসটি কার্যক্রম চলছে, এটি কমপক্ষে ৩৬ ঘন্টা থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলমান থাকবে বলেও জানান তারা। এই সময়ের মাধ্যে গ্যাসের চাপ ওঠানামা নিশ্চিত করে, এতে মধ্যে কি পরিমাণ গ্যাস আছে মজুদ তা নিশ্চিত করা হবে। কত মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে দেয়া যাবে এই কার্যক্রমে থেকে তা নিশ্চিত করা যাবে। তবে, মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এখানে গ্যাস আছে। দেশে এটি ২৮ তম গ্যাস কূপ হিসেবে এটি পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে।
এর আগে ২০০৪ সালে প্রথম শ্রীকাইলে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হলেও ত্রুটিপূর্ণ খনন কাজের কারণে সেবার গ্যাসের সন্ধান মেলেনি। পরবর্তিতে পাশের মকলিশপুর গ্রামে ২০১২ সালের ৫ মে হতে শুরু করে ৩০ জুন পর্যন্ত (শ্রীকাইল-২ নামে) পূন:খনন করে ৩ হাজার ২১৮ মিটার গভীরে গ্যাস পাওয়া যায়।
শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে। এটি বাঙ্গরা গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৭ কি.মি. দূরে ও একই অভিন্ন ভূ-কাঠামোতে অবস্থিত এবং এই দুটি ক্ষেত্র ১৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ত্রিমাত্রিক জরিপের ফল থেকে জানা যায়, এই গ্যাস ক্ষেত্রে ১৬১ বিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এতদিন শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রের দুটি কূপ থেকে দৈনিক ৪১-৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে তা জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হচ্ছিলো। এখন নতুন এই আবিষ্কার জ্বালানী খাতের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীকাইল ইস্ট এর দায়িত্বপ্রাপ্ত খনন অধিকর্তা মহসিনুল আলম জানান, তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তারা গ্যাসের অস্তিত্ব সন্ধান পান। ৩ হাজার ৬৫ মিটার গভীরে অবস্থিত। তিনি বলেন, আপাতত যা বোঝা যাচ্ছে আমরা প্রায় ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।
তিনি বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় থাকে কত দ্রুত গ্রীড লাইনে দিতে পারা যায়। আর এরই মধ্যে আমাদেরকে অন্তত সাড়ে ছয় কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে জাতীয় গ্রিডের সাথে এই ক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহ সংযুক্ত করতে। তাছাড়া এরই মধ্যে পাইপ কেনা, জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে রয়েছে। এটির কাছাকাছি প্রসেস প্লান্ট রয়েছে কুমিল্লার মুরাদনগরের মকলিশপুরস্থ শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র। যার ফলে, মাত্র শুধু ৬ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করেই গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও জানায় বাপেক্স। সুতরাং কেনাকাটা এবং অধিগ্রহণ যত দ্রুত করা সম্ভব ততো দ্রুত গ্যাস সরবরাহ দেয়া সম্ভব। তবে, কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ শুরু করা সম্ভব তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এ সময় বাপেক্স এর কারিগরি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, বাপেক্সের ডাটা ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক সেলিমা শাহনাজসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাপেক্স এর কারিগরি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান রয়েছে। কি পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে তা নিশ্চিত করার জন্য। তারপরে বলা যাবে আসলে কী পরিমাণ গ্যাস এখান থেকে সরবরাহ করা যাবে।
তবে, এখানে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। আগামী ২-৩ দিন ডিএসটি পরীক্ষা সম্পন্ন হলেই কেবল তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা। আগামী ২-৩ দিন প্রতিনিয়তই গ্যাসের চাপ পরীক্ষা করা হবে।
বিগত দুই বছরে বাংলাদেশের নতুন কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। সুতরাং মুজিববর্ষে এটি একটি নতুন চমক, শ্রেষ্ঠ উপহার বলে মনে করছেন পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর নবীনগর উপজেলার বাঙ্গরা ও হাজিপুরের মধ্যবর্তী মাঠে অবস্থিত ”শ্রীকাইল ইস্ট-১ অনুসন্ধান কূপ রূপকল্প-১ খনন প্রকল্প” নামে এই গ্যাস ক্ষেত্রে গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধিন কোম্পানী ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড’ বাপেক্স।
এই স্থানটি ব্রহ্মণবাড়িয়া জেলায় হলেও খননকৃত ভূমিটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজলার জাড্ডা বা জারেরা মৌজায় হওয়াতে এই গ্যাস ক্ষেত্রটিকে মুরাদনগরের শ্রীকাইল গ্যাস ক্ষেত্রের নামানুসারেই এর নাম করণ করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল,৫ মার্চ ২০২০