তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ সাংবাদিকরা দেশ,জাতি এবং সমাজের বিবেক। কারণ তারা লেখনীর মাধ্যমে সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন। তাদের লেখনীর মাধ্যমে সমাজ,রাষ্ট্র এবং সরকার দিক-নির্দেশনা পায়। তাই শিগগিরই গণমাধ্যমকর্মী আইন মন্ত্রিপরিষদে উঠবে। এর আওতায় ইলেকট্রোনিক মিডিয়াসহ সব ধরনের গণমাধ্যম কর্মীদের আইনি সুরক্ষায় আনা যাবে।’
বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-এর দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
গণমাধ্যমকর্মী আইনে যেসব সমস্যা ছিল,তা সমাধান করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন,গণমাধ্যমকর্মীরা কোনওভাবেই শ্রমিক নয়। তাই এ বিষয়ে আরেকটি সভা করার পর গণমাধ্যমকর্মী আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়ে যেতে পারবো বলে আমি আশাবাদী।
ডিইউজের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফইজে-এর সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ। ডিইউজে এর সভাপতি আবু জাফর সূর্যের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,` নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই ‘নবম ওয়েজবোর্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন,` অন্যান্যবার ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করার সময় এতবড় চ্যালেঞ্জ ছিল না। কিন্তু নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ এ ব্যাপারে হাইকোর্টে মামলা ছিল এবং রুল জারির পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ওই মামলায় তলব করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন,‘ আমরা আইনি প্রতিবন্ধকতা ভ্যাকেন্ট করে ভ্যাকেন্টকালিন সময়ে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছি।’এসব বিষয় নিজে অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে কয়েকবার কথা বলে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয় বলেও তথ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে ভাষাহীনদের মুখের ভাষা দিতে পারেন এবং ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতাবান করতে পারেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ বর্তমান সরকার বিশেষত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাংবাদিক-বান্ধব’ একজন নেতা। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ১১ বছরে দেশের গণমাধ্যমের অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। ১১ বছর আগে দেশে পত্রিকার সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ শ’র মতো। বর্তমানে এ সংখ্যা সাড়ে ১২ শ’র উপরে। ১১ বছর আগে দেশে ইলেকট্রোনিক মিডিয়া ছিল ১০ টি। বর্তমানে ৩৪ টি ইলেকট্রোনিক মিডিয়া সম্প্রচারে আছে ।’
ড. হাছান বলেন, আগে হাতে-গোনা কয়েকটি ‘অনলাইন’ পত্রিকা ছিল। এখন রেজিস্ট্রেশনের জন্য সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ‘অনলাইন’ পত্রিকার আবেদন জমা রয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা যেখানে দিন-দিন কমছে, সেখানে আমাদের বেড়েছে। এরফলে, এখন সংবাদকর্মীদের ব্যাপ্তি ও পরিধিও বেড়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধু সরকারের নীতির কারণে।
সংবাদপত্র বাঁচিয়ে রাখে সাংবাদিকরা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি,সাংবাদিকরা কাজ না করলে কোনও সংবাদপত্র টিকবে না। আর সাংবাদিকদের বঞ্চিত করে সংবাদপত্রের সমৃদ্ধি আসতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রের সমৃদ্ধির স্বার্থেই ঘোষিত ওয়েজবোর্ড পালন ও বাস্তবায়ন করা উচিৎ। মামলার বেড়াজাল দিয়ে এটি লংঘিত করা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।’
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে ওয়েজবোর্ডের অন্তর্ভূক্তির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়েজবোর্ড গঠিত হয়েছিল প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য। আর পার্লামেন্টে পাস করা আইনের ভিত্তিতে ওয়েজবোর্ড গঠিত হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে অন্তর্ভূক্ত করতে হলে আবার আইন করা প্রয়োজন। তবে আমরা যে গণমাধ্যমকর্মী আইন করছি, তার মাধ্যমে টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমকর্মীকে আইনি সুরক্ষায় আওতায় আনা যাবে।’
ড.হাছান বলেন, আপনাদের সুখবর দিতে চাই, বিএনপি-জামাতের আমলে গণমাধ্যমকর্মীদের যে শ্রমিক বানিয়ে দেয়া হয়েছিল, গণমাধ্যমকর্মী আইনে সেটি নিরসন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সচিব কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরেকটি সভার পর আমরা সেটি মন্ত্রিসভায় নিতে পারবো। একইসাথে আশা করছি, সম্প্রচার আইনটিও খুব সহসা আইন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় হয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে আসবে। তখন আমরা সেটিও মন্ত্রিসভায় নিয়ে যেতে পারবো।’
গণমাধ্যমকর্মীদের চাকুরির সুরক্ষা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কাউকে যদি ছাঁটাইও করতে হয়,সেটিও আইন মেনেই করতে হবে। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলা একটা ছাঁটাইয়ের কাগজ ধরিয়ে দেয়া যায় না। রাষ্ট্রও সেটি অনুমোদন দেয় না। একজন মানুষ যেখানে কাজ করছে বছরের পর বছর,তাকে হঠাৎ করে ছাঁটাইয়ের কাগজ ধরিয়ে দেয়া,এটি কোনওভাবেই সমীচীন নয়,আইনসম্মতও নয়।’
তিনি বলেন, ‘ মালিকপক্ষকে আমি অনুরোধ জানাবো,যে কাউকে যে কোনও সময় দয়া করে এভাবে ছাঁটাই করবেন না। তাদের একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলা কোনওভাবেই সমীচীন নয়।’
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২৯ ফেব্রুযারি ২০২০