চট্টগ্রাম ব্যুরো :
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা অনুমোদন নিয়ে গড়িমসি করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নিয়োগ মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চমেক-এর উপ-পরিচালক (স্থাস্থ্য) ডা. কাজী শফিকুলসহ ৯ কর্মকর্তা ও নিয়োগপ্রাপ্ত ১১ জনের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কমিশনের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা চলতি বছরের ২৫ মার্চ এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করেছেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ওই ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে প্রতিবেদন দাখিলের দুই মাসেরও বেশি সময় পার হলেও এখনও পর্যন্ত এ মামলার অনুমোদন দেয়নি কমিশন। দুদক সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চাকরি পেলেন যারা
দুদক সূত্র জানায়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। এদের সকলকেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, মোটিভেটর পদে মো. মোহসিনকে (রোল নম্বর-১৫) অতিরিক্ত নম্বর পাইয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। মিলনুজ্জামানকে ৪৬ নম্বরের জায়গায় ৪৮ নম্বর দিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তার খাতায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করলে ৪৬ নম্বর হয়। অফিস সহকারী মো. তাকবিরের পরীক্ষার খাতা কাটাকাটি করে অতিরিক্ত নম্বর পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। রেকর্ডকিপার পদে নিয়োগ পাওয়া শাহীন সুলতানার লিখিত খাতাই পাওয়া যায়নি। টেলিফোন অপারেটর সাহিবা সুলতানা ও লিলেন কিপার মো. তৌহিদুল আলম চৌধুরীকে ভুল উত্তরে নম্বর দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে পরিসংখ্যান সহকারী দিপীকা দাশ, অফিস সহকারী কাওছার আহমেদ, টেলিফোন অপারেটর শরীফ তরফদার, ওয়ার্ডমাস্টার রাজীব কুমার দে, মেডিকেল কিপার আব্দুর রহমানকে অবৈধভাবে চাকরিতে নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
যে ৯ ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
অবৈধভাবে এদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে নিয়োগ মূল্যায়ন কমিটির নয়জন সদস্যকেও এ মামলায় আসামি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন— চমেকের উপ-পরিচালক (স্থাস্থ্য) ডা. কাজী শফিকুল, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. খোরশেদ শিরীন, মেডিসিন বিভাগের আবাসিক ফিজিশিয়ান ডা. মোমেন সরকার, গাইনী বহিঃবিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. কামরুন নেসা বেগম, শিশু বহিঃবিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. গিয়াস উদ্দিন, রেডিও থেরাপি বহিঃবিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলী আসগর চৌধুরী, সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. শেখ মোহাম্মদ জামাল মোস্তফা, বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থার মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দত্ত ও মেডিকেল অফিসার (স্টোর) ডা. নাজমুল আখতার।
ফাইল পায়নি দুদক!
জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ফাইলটি (অনুসন্ধান প্রতিবেদন) এখনও আমার কাছে আসেনি। ফাইলটি আমার কাছে আসলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘চমেকের নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি আমার জানা নেই।’
মূল্যায়ন কমিটির যোগসাজশ
সূত্র আরও জানায়, চমেক হাসপাতালে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লোকবল নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে অনুসারে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়।
মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কমিশনে এলে ২০১২ সালে কমিশন এই অনুসন্ধানে নামে। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছরের অধিক সময় অনুসন্ধান করে অভিযুক্ত ওই ২০ জনের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ২১৮/৪০৯/১৬১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক কে এম মিছবাহ উদ্দিন এ অভিযোগ অনুসন্ধান করেছেন।
শনিবার, ১৩ জুন ২০১৫ ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।