হোসনে আরা তালুকদার। গত ১৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বেতারের প্রথম নারী মহাপরিচালক। ১৯৮৬ সালের ২১শে জানুয়ারি সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেন তিনি। এরইমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরির ৩৪ বছর পার করেছেন। বেতারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এন আই বুলবুল
বাংলাদেশ বেতারের প্রথম নারী মহাপরিচালক হিসেবে আপনার অনুভূতি কেমন?
১৯৮৬ সালের ২১শে জানুয়ারি আমরা ছয়জন বাংলাদেশ বেতারে প্রথম মহিলা বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেই। আমরা সবাই ছিলাম সংবাদে।
বাংলাদেশ বেতারের প্রথম নারী মহাপরিচালক হিসেবে আপনার অনুভূতি কেমন?
১৯৮৬ সালের ২১শে জানুয়ারি আমরা ছয়জন বাংলাদেশ বেতারে প্রথম মহিলা বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেই। আমরা সবাই ছিলাম সংবাদে।
এটি বেতারের ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইলফলক বলতে পারি। দীর্ঘ সময় পর এসে আমাকে বেতারের মহাপরিচালকের পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এটি আমার জন্য অনেক সম্মানের। একইসঙ্গে আমার দায়িত্বও আরো বেড়েছে। আজকে একটি কথা বলতে হয়, এমন একটি পদে আসার জন্য আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি নারীবান্ধব বলেই আজকে নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন।
সম্প্রতি বেতারের চাকরি জীবনের ৩৪ বছর শেষ করেছেন। দীর্ঘ এই সময়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই?
৩৪ বছর আগের আর আজকের সময় এক নয়। অনেক পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘ এই সময়ে আমাকেও অনেকের মতো বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতায় অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু এটি সত্য, আপনি যদি আপনার সঠিক লক্ষ্যে থাকেন তাহলে সফল হবেন। আমিও আমার সঠিক পথে থাকার চেষ্টা করেছি।
সরকার নারীদের জন্য নানা রকম উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বেতারের ভূমিকা কেমন হতে পারে বলে মনে করেন?
বাংলাদেশ বেতারে শ্রোতার হার পুরুষের চেয়ে নারী বেশি। ফলে নারীরা এদিক থেকেও আমাদের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন। নারীদের জন্য আমাদের বেশ কিছু অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচার হচ্ছে। বাল্যবিবাহ রোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যসেবাসহ এমন কিছু অনুষ্ঠান আমাদের আছে। আগামীতে আরো কিছু পদক্ষেপ নিবো।
চলতি বছরে বেতারের কার্যক্রম নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারি বেতার দিবস। এদিকে ১৭ই মার্চ মুজিববর্ষ দিবস শুরু হচ্ছে। আমাদের নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরে এই দুটি দিবসকে ঘিরে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার দেশের সব অঞ্চলের শ্রোতারা শুনতে পারেন। আমার লক্ষ্য বেতারের শ্রোতাদের শতভাগ বেতারমুখী করা। আমি বলবো, এ বছরটি আমাদের জন্য রঙিন হবে।
এফএম রেডিওর এই সময়ে অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ বেতার পিছিয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
বাংলাদেশ বেতার পিছিয়ে পড়েছে, এটি সত্য না। আমরাও এফএম চ্যানেলে প্রবেশ করেছি। বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ও স্পোর্টসের অনেক অনুষ্ঠান শ্রোতারা নিয়মিত শোনেন। একটা বিষয় সুস্পষ্ট, এফএম চ্যানেলগুলোতে বাংলা-ইংরেজি মেশানো কথা শোনা যায়। যাকে আমরা বাংলিশ বলি। কিন্তু বাংলাদেশ বেতার বাংলিশমুক্ত। বাংলাদেশ বেতারের শ্রোতারা আমাদের অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে প্রমিত বাংলা অর্থাৎ শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার শিখতে পারে। যা এফএম চ্যানেলগুলো পারছে না। প্রমিত বাংলা জানার জন্য বাংলাদেশ বেতারের বিকল্প অন্য কোনো চ্যানেল হতে পারে না বলে আমি মনে করি।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই বেতারের অনুষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানে না। এগুলোকে তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেবেন?
সোস্যাল মিডিয়ায় আমাদের পেজ আছে। এ ছাড়া আমাদের কিছু অনুষ্ঠান লাইভ হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতারের দুর্বার, উত্তরণসহ এমন কিছু অনুষ্ঠান বরাবরই জনপ্রিয়। এরপরেও আরো কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো।
বার্তা কক্ষ, ২৯ জানুয়ারি ২০২০