দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী বছর থেকে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা আজ (২৩ জুন) এক বৈঠকে বসে নীতিগতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই বৈঠকটি আয়োজন করেছিল।
কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন থেকে সারা দেশে একটাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্যে একটাই পরীক্ষাই দিতে হবে। তবে এই পরীক্ষা কে আয়োজন করবে, কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে এসব প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এখন একসাথে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে। সারা দেশের ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যে বর্তমানে প্রায় আড়াই লক্ষ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে একাধিক পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বর্তমানে এই পরীক্ষা যেভাবে দিতে হয় তাতে তারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে তাদেরকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদেরকে যাতে আর এধরনের হয়রানি পোহাতে না হয় সেজন্যে সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
‘ছাত্রদের আগামী বছর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পৃথক পৃথক ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে না। সারা দেশে একই প্রশ্নপত্রে একই সময়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো হবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।’
অর্থাৎ কুমিল্লার কোন শিক্ষার্থী যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চান তাহলে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে না। কুমিল্লারই কোন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে তিনি এখন এই পরীক্ষা দিতে পারবেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী স্কোর বা নম্বর অর্জন করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারবেন।
‘যে কোন জায়গা থেকে, দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে তারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর জানান, পরীক্ষাগুলো হবে বিষয়ের ওপর। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য এই তিনটি বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। যে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে যেসব বিষয়ে পড়েছেন তাকে শুধু সেসব বিষয়েই পরীক্ষা দিতে হবে।
এই পরীক্ষায় শিক্ষার্থী যে স্কোর বা নম্বর অর্জন করবেন সেটার ভিত্তিতেই তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষার্থী যদি তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত পূরণ করতে পারেন তাহলেই তিনি সেখানে ভর্তি হতে পারবেন। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে কতো স্কোর থাকতে হবে সেটা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ই নির্ধারণ করবে।
‘আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, কিন্তু আমি যদি এখন সমাজ বিজ্ঞানে ভর্তি হতে চাই তাহলে আমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করবে কোন কোন বিষয়ে আমাকে কতো স্কোর করতে হবে।’ ভর্তি পরীক্ষায় ওই স্কোর অর্জন করতে পারলে শিক্ষার্থী তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে ভর্তি হতে পারবেন।
বার্তা কক্ষ, ২৩ জানুয়ারি ২০২০