ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। নানা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে আলোর মুখ দেখছে বিদেশ ভ্রমণের এ অত্যাধুনিক প্রকল্পটি।
আগামি ২২ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরেরদিন থেকে আগারগাঁও,যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে এ ডিজিটাল পাসপোর্ট বিতরণ করা শুরু হবে।
পর্যায়ক্রমে এটির কার্যক্রম ঢাকার বাইরে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে চালু হবে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ টি মিশনেও ই-পাসপোর্ট পর্যায়ক্রমে চালু হবে। দু’ক্যাটাগরির ই-পাসপোর্ট চার ধরনের ফি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জরুরি ও অতি জরুরি এবং মেয়াদ হচ্ছে ৫ ও ১০ বছর।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন,সব প্রস্তুতি ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বিখ্যাত জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস জিএমবিএইস ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট নিয়ে কাজ করছে। এ পাসপোর্ট পেতে আবেদনসহ সবকিছু অনলাইনে করা যাবে। ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অনেক
উন্নতমানের। তাই নকল করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমান এমআরপি ব্যবস্থা থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটায় বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাবিহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।
মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ জানান,‘২২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করার পর এদিন আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে নতুন এ পাসপোর্ট তুলে দেব। পরেরদিন থেকে ঢাকায় মাঠপর্যায়ে বিতরণ শুরু করব।পরবর্তীতে সারাদেশে এটির কার্যক্রম চালু করা হবে।’
প্রকল্প তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু এবং অটোমেটিক বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পটি চার হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব তহবিলে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
১০ বছরে ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে। তথ্য মতে, দু’ মিলিয়ন পাসপোর্ট তৈরি হবে জার্মানিতে। ফলে যারা আগে আবেদন করবেন, তারা জার্মানির তৈরি পাসপোর্ট পাবেন। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং ভেরিডসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা ছিল জুলাই মাসে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই বর্তমানে প্রচলিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের বই সঙ্কট দেখা দেয়। ফলে সারাদেশে জরুরি পাসপোর্ট পেতেও বিলম্ব হয়। পরবর্তীতে জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ এমআরপি বই আমদানি করে সে সঙ্কট সামাল দেয়া হয়।
সূত্র মতে,আপাদত ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি দু’টিই চালু থাকবে। নাগরিকরা যে ধরনের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবে, তাদের সেই পাসপোর্টই সরবরাহ করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন করতে হবে না। এমনকি ছবি সংযোজন ও তা সত্যায়ন করারও দরকার হবে না। তবে পাসপোর্ট পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি লাগবে।
ই-পাসপোর্টের আবেদন ফি
বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা।
এছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৭ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা।
ই-পাসপোর্ট নবায়ন
ই-পাসপোর্ট নবায়ন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেয়াদ শেষ হলে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত তথ্য সংযোজন বা ছবি পরিবর্তনের প্রয়োজন না হলে আবেদনকারীকে উপস্থিত থাকতে হবে না। যদি সংশোধনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস বা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হবে।
বাংলাদেশে অতি জরুরি পাসপোর্ট নবায়ন করা হবে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। জরুরি পাসপোর্ট নবায়ন করা হবে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে।
সাধারণ আবেদনে নবায়ন করা হবে সর্বোচ্চ সাত কর্মদিবসের মধ্যে। কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার পাসপোর্ট বাতিলের জন্য নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস বা বাংলাদেশ মিশনে জমা দিতে হবে। বাতিল করা পাসপোর্ট আবেদনের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারদের কাছে ফেরত দেয়া হবে।
১৮ বছরের নিচে হলে
১৮ বছরের নিচে সব আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর। বৈদেশিক মিশন থেকে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানায় জায়গায় বাংলাদেশে যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হবে।
কূটনৈতিক পাসপার্টের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার উইং অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদন জমা দিতে হবে।
সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশনের স্থায়ী কর্মচারী,অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও তাদের নির্ভরশীল স্ত্রী,স্বামী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের ১৫ বছরের কম বয়সের সন্তানের ক্ষেত্রে সাধারণ আবেদনের ফি দিয়ে অতি জরুরি সুবিধায় পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।
বার্তা কক্ষ , ১৯ জানুয়ারি ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur