নারায়ণগঞ্জের চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছির গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। তার মৃত্যুর সংবাদ গ্রামে পৌঁছার পর স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্ত্রী সিমা আক্তার ও একমাত্র ছেলের কান্নায় পরিবেশ ভাড়ি হয়ে উঠছে।
নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছি (৩৭) শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রামভদ্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাই বন্দুকছির ছেলে।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রাপুর এলাকার আবদুল হাই বন্দুক ছির ছেলে হুমায়ূন কবীর বন্দুকছী (৩৭) ঢাকার উত্তরার ১৪ নম্বার সেক্টরে একটি হাউজিং কম্পানীতে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতো। (খবর নয়াদিগন্ত)
শুক্রবার ছুটি থাকায় সকালে বাড়ী আসেন তার প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে নাইম কবীর ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। ঐ দিনেই সন্ধ্যায় শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া
উপজেলার সুরেশ্বর লঞ্চ ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় হুমায়ুন কবীর। মধ্যরাতে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর নামক এলাকায় বোগদাদীয়া-১৩ লঞ্চের ধাক্কায় এম ভি মানিক-৪ লঞ্চের ডেকের মাঝামঝি বিশাল অংশ জুড়ে ঢুকে পড়ে এবং এম ভি মানিক-৪ লঞ্চটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
এ সময় এম ভি মানিক-৪ লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রীরা ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং লঞ্চের মধ্যে দৌড়া-দৌড়ি শুরু করে। এতে ঘটনাস্থালে হুমায়ুন কবীর বন্দুকছী দু-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে মারাত্মক আহত হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তিনি লঞ্চের মধ্যে মারা যায়। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
হুমায়ূন ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা শোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তার নাইম কবির (৬) নামে একটি ছেলে আছে। নাইম ৩নং রামভদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এদিকে একই লঞ্চের যাত্রী সখিপুর থানার চরভাগা এলাকার কৃষক ফজলুল হক ভূইয়া (৬৫) নামে একজন পা ভেঙে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলেও জান গেছে। এছাড়াও পরিচয় না পাওয়া অন্য আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সুত্র জানিয়েছে।
নিহত হুমায়ূনের স্ত্রী সিমা আক্তার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, শুক্রবার ছুটি ছিল। তাই আমাদের দেখতে দুপুরে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। পরে রাতের লঞ্চে শরীয়তপুরের শুরেশ্বর থেকে ঢাকা সদরঘাট রওনা দেয়। রাত ১টার দিকে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার স্বামী নিহত হন। এখন আমার ছেলে কাকে বাবা বলে ডাকবে?
নিহত হুমায়ূনের চাচাতো ভাই ফারুক বন্দুকছি বলেন, আমি ঢাকা ছিলাম। হুমায়ূন ভাইর মৃত্যুর কথা শুনে তাকে লঞ্চে উদ্ধার করতে যাই। তার দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে যায়। ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বার্তা কক্ষ,৭ ডিসেম্বর ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur