সোমবার ০৮ জুন ২০১৫ : ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক, চাঁদপুর টাইমস :
মিয়ানমারে ‘রাষ্ট্রহীন’ দিন যাপনের কষ্টকর অতীত মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করতে সচেষ্ট হয়েছেন অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশকারী রোহিঙ্গা পুরুষরা। আর তার জন্য মুসলিম বিধবা নারী খুঁজছেন তারা। বিয়ের সময় যাতে কোন ধরনের বাধা-বিপত্তি পোহাতে না হয় সেজন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে সন্তানহীন বয়স্ক বিধবাই তাদের পছন্দ। রোহিঙ্গাদের বিধবা বিয়ে করার প্রবণতা নিয়ে এক প্রতিবেদন এমন তথ্য জানিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ ধরনের বিয়ে মালয়েশিয়ার পারলিস, কেদাহ এবং পেনাং প্রদেশের একটি সাধারণ ঘটনা। আর এসব বিধবাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকলে সেটা তো উপরিলাভ। কিন্তু রোহিঙ্গা পুরুষদের প্রধান উদ্দেশ্য হল মালয়েশিয়ায় স্থায়ী অভিবাসন এবং নাগরিকত্ব পাওয়া। আর বিধবাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিয়ের উদ্দেশ্য হলো নতুন জীবনসঙ্গীর সাহচর্য লাভ। জীবনসঙ্গীরা তাদের নিজস্ব ধানের ক্ষেতে ফসল ফলাতে এবং বাড়ির যাবতীয় কাজে সহায়তা করবে এমনটাই চান তারা।
হাবিবা নামের ৬৫ বছর বয়সী এক বয়স্ক বিধবা জানান, ৪৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা পুরুষকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্তির খাতায় কার কতটুকু প্রাপ্তি থাকবে তার হিসাব কষেই তারা বিয়ে করেন। তিনি জানান, এরকম বয়স্ক অনেক বিধবা নারীকেই তিনি চেনেন যারা রোহিঙ্গাদের সাথে বিয়ের বন্ধনে জড়িয়েছেন।
হাবিবা বলেন: “বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হলে আমার স্বামীর অবৈধ অবস্থার পরিবর্তন হয়। এখন সে ‘এদেশের একজন নাগরিকের স্বামী’।’
তিনি জানান, “এসব অবৈধ অভিবাসীদের অনেক আত্মীয় এখানে আছে। তাই আমাদের গ্রামে খুব বেশি সমস্যা ছাড়াই বসতি স্থাপন করতে পারছে তারা।”
রোহিঙ্গাদের বিস্তারে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পারলিস প্রদেশের বিধানসভার এক সদস্য বলেন, অনেকেই রোহিঙ্গাদের এই বিস্তারে খুশি নয়। তিনি জানান, ‘রোহিঙ্গারা তাদের কন্যা সন্তানদেরকে বিয়ের প্রলোভন দেখাতে পারে ভেবে অনেক বাবা-মা উদ্বিগ্ন আছেন। বিয়ের মাধ্যমে গ্রামে প্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে এটা ভেবেও অনেকে উদ্বিগ্ন।’
স্থানীয়দের এই উদ্বিগ্নতা মোটেও ভিত্তিহীন নয়। কারণ এরইমধ্যে অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পুরো পরিবারকে এখানে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাসকারী খাশিম এবং হাসিন এ দলেরই লোক। এ বছরের শেষেই তাদের পরিবারের এখানে আসার কথা রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা তাদের পরিবারকে এখানে আনার জন্য জমানো টাকা পাঠাতে কুণ্ঠা বোধ করেন না বলেও উল্লেখ করেন তারা।
তারা জানান, মিয়ানমারে তাদের আদি গ্রামে প্রায় ৩০০ মানুষকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব গ্রামবাসীরা মালয়েশিয়া আসার জন্য নিজেদের টাকা দিয়ে একটি নৌকা কিনেছে। এমনকি নৌকা চালানোর জন্য একজন নাবিককে ভাড়াও করেছে তারা।
হাসিন বলেন, “সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে যখন সাগর কম উত্তাল থাকে তখনই এই যাত্রা শুরু হবে।”
খাশিম বলেন: “এখানে তাদের নিয়ে আসার পেছনে টাকা খরচ করাটা আমাদের জন্য ভালো। এখানে আশা আছে এবং এটি একটি মুসলিম দেশ। আমরা এখানে অনেক সুখী।”
খাশিম এবং হাসিন জানান, তাদের অনেক স্বজনই মিয়ানমারে গুলি খেয়ে অথবা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur