পেঁয়াজের চড়া মূল্যে অন্যান্য সময়ের চেয়ে গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দাম। রান্নার এই নিত্য প্রয়োজনীয় আনুসাঙ্গিক ছাড়া বাঙালী ভোজে পরিপূর্ণ রসনা তৃপ্তি পাওয়া একটু দুষ্কর। পেঁয়াজের এই উর্ধ্বগতি মূল্যে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ কম পেঁয়াজ কিনে দৈনন্দিন রান্নার কাজ চালাতে হচ্ছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার ছেড়ে দিয়েছে পেঁয়াজ খাওয়াই। এই মুহূর্তে আপনার বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দা ব্যবহার করে পেঁয়াজ চাষ করা গেলে কেমন হয়?
বারান্দায় চাষ করে আপনার পারিবারিক পেঁয়াজের চাহিদা নাও মিটতে পারে, তবে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিকালীন সময়ে সামান্য হলেও বাজারের পেঁয়াজ না কিনেই দিব্যি নীরব প্রতিবাদে সামিল হতে পারেন। এছাড়া পেঁয়াজের বিপরীতে গাছের পাতা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।
পেঁয়াজ বাড়ির ছাদবাগানে কিংবা বেলকুনিতে জন্মানোর জন্য অন্যতম জনপ্রিয় সবজি এবং বসন্তের প্রথম ফসলের মধ্যে একটি। শীতকালে পেঁয়াজকে বহুমুখী ফসল হিসেবে চাষ করে সংরক্ষণ করা যায়।
পেঁয়াজ কাঁচা এবং রান্না উভয় অবস্থায় ব্যবহৃত হওয়া অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি। পেঁয়াজ বা এলিয়াম পরিবারভুক্ত সবজি চাষের জন্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাঃ
স্থান নির্ধারণ
বাসার বারান্দায় বা ছাদে এমন একটি স্থান বেছে নিন যেখানে প্রচুর আলো বাতাস পায়।
টব
আলু চাষের জন্য টব বা প্লাস্টিক অথবা কাঠের কনটেইনারও ব্যবহার করা যায়। মাঝারি সাইজের একটি টব বেছে নিন। প্লাস্টিকের বালতিতেও করতে পারেন। মাঝারি আকৃতির টবে ৫০টি পিয়াজ গাছের চাষ করা সম্ভব।
মাটি প্রস্তুত
উর্বর মাটি এবং পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত টবে পেঁয়াজ চাষ করতে হবে। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। পেঁয়াজ সাধারণত ঠাণ্ডা জলবায়ুর উপযুক্ত ফসল। যদি পেঁয়াজ চাষ করার সময় তাপমাত্রা বেশি হয় তাহলে উক্ত পেঁয়াজ ঝাঁঝালো। তবে মনে রাখবেন এঁটেল মাটিতে পেঁয়াজের চাষাবাদ করা যায় না। মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে।
পেঁয়াজ তিনটি পদ্ধতিতে চাষ করা যায়
১) শল্ক কন্দ রোপণ করে।
২) সরাসরি বীজ বুনে।
৩) বীজতলায় বীজ বুনে চারা উত্তোলন করে তা রোপণ করে। বীজ হতে চারা তৈরি করে রোপণ করলে অধিক ফলন হয়
ভাল বীজের বৈশিষ্ট্য তিনটি
• ভাল বীজ হাত নিয়ে চাপ দিলে চাপ বসবে না। খারাপ বীজ হলে চাপ বসবে।
• মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে চাপ দিলে ভাল বীজ হলে ভেঙ্গে যাবে। খারাপ বীজ হলে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।
• পানিতে দিলে ভাল হলে পানিতে ডুবে যাবে। খারাপ হলে ভেসে উঠবে।
যত্ন
বিশেষ করে প্লাস্টিকে কন্টেইনার ব্যবহার করলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া জন্য আগেই কন্টেইনারটিতে কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে নিতে পারেন।
ফসল তোলা
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আগাম চাষে সাধারণতঃ চারা রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এবং নাবী চাষে চারা রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ সংগ্রহের উপযোগী হয়ে যায়। পেঁয়াজ সংগ্রহের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে গাছের ডগা ভেংগে দিলে ফলন ভাল পাওয়া যায়।
সংরক্ষণ
পেঁয়াজ ভালো করে শুকানোর পরে গুদামজাত করতে হয়। গুদাম ঠান্ডা ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থাযুক্ত হওয়া উচিত। গুদামে পরীক্ষা করে পচা ও রোগাক্রান্ত পেঁয়াজ বেছে সরিয়ে ফেলতে হয়।
বিশেষ নোট
পেঁয়াজের চাষ শুধু শীতকালেই হয় না এখন বর্ষাকালেও চাষ করা হচ্ছে।
সবশেষে
এটা টবে চাষের পদ্ধতি, তাই পোকা-মাকড় সংক্রমণ, বা চিকিৎসা ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যেহেতু আপনি আপনার বাসার ছাদে বা বারান্দায় করবেন, তাই তা অবাণিজ্যিক। আর সেই জন্য কোন সমস্যা হলে তার চিকিৎসা করতে হলে উল্টো আরো ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি বড় ধরনের ঝামেলা হয়, নতুন ভাবে চাষ করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
বার্তা কক্ষ,২৮ নভেম্বর ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur